নিউজ ডেষ্ক- রাস্তা থেকে সবজি ক্ষেতের দিকে তাকালে দেখা যায় নতুন এক পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে সবজি। প্লাস্টিকের ছিদ্র ভেদ করে বেড় হয়েছে বিভিন্ন ধরণের সবজির গাছ।
এক কৃষককে কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ পদ্ধিতর প্রবর্তক এসডিএস-এর কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ খাজি আলম। পাশের একটি সবজি ক্ষেতেই দেখা হলো তার সাথে। তার কাছে যানা গেলো এ পদ্ধতির ইতিহাস।
তিনি জানান, শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস)-এর বাস্তবায়নে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফান্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে কৃষি ইউনিটের আওতায় ২০১৫ সালে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নে ছোট কৃষ্ণপুর গ্রামে লুৎফর আকন নামে একজন কৃষককে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষের পরীক্ষা মূলক প্রদর্শনী দেওয়া হয়।
একটি প্রদর্শনীর সফলতায় আজকে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ জাজিরা উপজেলা থেকে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জাজিরা উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে শসা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, টমেটো, মরিচ, বেগুন, তরমুজ, স্কোয়াস ইত্যাদির চাষ হচ্ছে।
শসা চাষী ফরহাদ খান বলেন, খরা মৌসুমে এক সময় শসার চাষ হতো। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শসার গাছ ছোট অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই শসার আবাদ প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম। মালচিং পদ্ধতিতে শসার ভালো ফলন হওয়ায় এ বছর ২০ শতক জমিতে শসার চাষ করেছি। ধুন্দল চাষি সুমন চোকদার বলেন, এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তিতে খরচ কম হয়।
কারণ সার মাত্র একবার দিতে হয় এবং আগাছা হয় না বলে শ্রমীক খরচ কম লাগে। আমার ২০ শতক জায়গায় ধুন্দল চাষে প্রায় সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। এ খরচ বাদ দিয়ে আমার প্রায় ১ লক্ষ টাকার উপড় ধুন্দুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। শসা চাষি আব্দুর রব কাজী বলেন, গত বছর ২০ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে আমার খরচ বাদে ১ লক্ষ ২০ হাজর টাকা লাভ হয়েছে। যারা মালচিং ছাড়া চাষ করেছে তাদের গাছ ছোট থাকতেই ভাইরাসে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর আমি ৬০ শতক জমিতে এ মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করেছি।
কৃষিবিদ খাজি আলম মালচিং পেপার বিষয়ে বলেন, কারখানায় বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের খুবই পাতলা পূণঃ ব্যবহারযোগ্য বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক। এর উপড়ে সিলভারের আবরন এবং নিচে কালো আবরন দ্বারা আবৃত থাকে। যা সবজি চাষের জন্য ব্যবহার হয়। পুরুত্ব ২০-৩০ মাইক্রোন। সাধারণত বিভিন্ন ধরণের মালচিং পাওয়া যায় যেমন দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার ও প্রস্থ ১.২ মিটার বা দৈর্ঘ্য ৬০০ মিটার এব্য ০.৯ মিটার, দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার এবং প্রস্থ ৫০০ মিটার।এ পদ্ধতিতে আগাছা হয় না। পানির অপচয় কম হয়, অর্থাৎ সেচ কম লাগে। লবণাক্ততা কমে যায়। মাটির উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বাড়ে এবং ক্ষতিকর অনুজীবের সংখ্যা কমে। মাটিবাহীত রোগ জীবানু কম হয়। নেমাটোড থাকে না।
ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ফসলের পোকার উপদ্রব কম হয়। মাটি ঝুরঝুরে থাকায়, মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। শ্রমিক খরচ কম লাগে। মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অমৌসুমী সবজি চাষ করা যায়। রাসায়নিক সার কম লাগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত কম হয়। গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায়। তিনি আরো বলেন, মালচিং পেপার পদ্ধতিতে সবজি চাষ শরীয়তপুর জেলার গর্ব। এ পদ্ধতি এখন সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে। এ পদ্ধতির চাষে কৃষক খুবই লাভবান হচ্ছে।