ভ্যাট প্রত্যাহারের পরও সয়াবিন তেল নিয়ে চলছে কারসাজি

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক- সয়াবিন তেল নিয়ে এখনো কারসাজি চলছে। আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত পর্যায়ে ভ্যাট এবং এলসি মার্জিন প্রত্যাহারের পরও নিত্যপণ্যটির কৃত্রিম সংকট কাটছে না। বাজার থেকে খোলা তেল একেবারেই উধাও। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক দ্রব্যমূল্য তালিকায়ও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। এছাড়া মিল পর্যায় থেকে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে পণ্যটি এখনো চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। মানা হচ্ছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শারিয়ার বলেন, তেল সরবরাহে নিম্ন পর্যায়ে কোনো ধরনের কারসাজির চিত্র দেখা যায়নি। সাপ্লাই চেইনের উচ্চপর্যায় থেকে সমস্যার কারণে তেল নিয়ে দেশে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েকটা মিলে অভিযান পরিচালনা করে দেখেছি তারা মিল পর্যায় থেকেই আইনের ব্যত্যয় করেছে। আমাদের কাছে এর প্রমাণ আছে। পাশাপাশি এসও’তে (সাপ্লাই ওর্ডার) ব্যবসায়ীরাও ঘাপলা করেছে। এসব মিলের ব্যাপারে আমরা একটি সিদ্ধান্তে যাব। তখন সবকিছু সামনে এসে যাবে।

এদিকে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের পর এবার আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতদিন আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর আগে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের ওপর ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এসব সিদ্ধান্তের পর ভোক্তার মনে একটু প্রশান্তির বার্তা এসেছিল। এই বুঝি দাম কমবে। কিন্তু দাম কোনোভাবেই কমেনি। বরং ক্রেতাদের দোকানে গিয়ে তেল নেই শব্দটি শুনতে হচ্ছে।

চলতি বছরের ৩১ মের পর থেকে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও রামপুরা বাজারে গিয়ে খোলা তেল একেবারেই পাওয়া যায়নি। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি খুচরা বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দ্রব্যমূল্যের তালিকা তৈরি করে টিসিবি। সেখানে শুক্রবার সংস্থাটি খোলা সয়াবিনের দাম উল্লেখ করেনি। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা তেল পাওয়া যায়নি। বিক্রেতাদের অভিযোগ, নিম্নবিত্ত মানুষের এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কেনার সামর্থ্য নেই। তারা খোলা সয়াবিন অল্প পরিমাণে ক্রয় করে। কিন্তু বাজারে পণ্যটি না থাকায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। অতি মুনাফার লোভে মিল থেকে খোলা তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। পাশাপাশি বোতলজাত এক লিটারের সয়াবিন তেলও সরবরাহ এখন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে এখনো পণ্যটির দাম কমানো যাচ্ছে না।

খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮০০-৮২০ টাকা। কিন্তু সরকারের পক্ষে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ দর ৭৯৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দর উপেক্ষা করে খুচরা বাজারে লিটারে ১২-২২ ও পাঁচ লিটারে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, সরকার যেসব সুবিধা দিচ্ছে তা ক্রেতা পাবে না। সব সুবিধা আমদানিকারক ও মিলারদের জন্য। তারা এত সুবিধা নিয়েও তেলের দাম কমাচ্ছে না। বরং সরবরাহ কমিয়ে রেখেছে। আর আমাদের বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে বিধায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানিকে না ধরলে তেলের দাম স্বাভাবিক হবে না। দেখা যাচ্ছে, তদারকি টিম মিল পর্যায়ে অভিযান করে তাদের দোষ খুঁজে পাওয়ার পরও শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি। কিন্তু শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ খুচরা বিক্রেতাদের।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বাজারে তেলের সরবরাহ ঠিকভাবেই করা হচ্ছে। প্রতিদিন মিল থেকে ট্রাক যাচ্ছে। সরবরাহে মিল থেকে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। তিনি জানান, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাম নিয়ে ঝামেলা করছেন। পাশাপাশি তিন স্তরে ভ্যাট কমানো হয়েছে। এতে সামনে দামও কমে আসবে। তবে বিশ্ববাজারের দর আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *