নিউজ ডেষ্ক-চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের মার্চ শেষে ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। তবে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ঘাটতির অঙ্ক কিছুটা কমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৪ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি কমেছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় চলতি বছরের শুরু থেকে সে সুবিধা তুলে দেওয়া হয়। ফলে মার্চে খেলাপি ঋণের অঙ্ক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। তাই এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি মেটানোর প্রথা দীর্ঘদিন যাবৎ দেশে প্রচলিত ছিল। সে সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করছি, যেন তারা নিজেদের ব্যবসায় মডেল নতুন করে সাজিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে সরকারি ব্যাংকগুলো ক্রমেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে। করোনা অতিমারির সময় এসব ব্যাংক কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে না পারলেও তাদের অর্থ জোগান দিতে হয়নি। অন্যদিকে ব্যাংক খাত থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে করপোরেট কর আদায় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।’
জানা গেছে, ঋণ বিতরণের অঙ্ক দিন দিন বাড়লেও আয় সেভাবে বাড়ছে না। যে কারণে বছরের পর বছর ধরে কিছু ব্যাংক বড় ঘাটতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি বাড়লে তার প্রভাব পড়ে মূলধনে। করোনকালে দেওয়া বিভিন্ন সুবিধা তুলে নেয়ায় ব্যাংক খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায়। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তিন মাস আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক, বিশেষায়িত দুটি ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন রেখেছে। সব মিলিয়ে মার্চ পর্যন্ত ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক খাতের গড় মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যা এক বছর আগে ছিল ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশেষায়িত খাতের দুটিসহ সরকারি ৭ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রাত্ত সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এরপর রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৯৮৪ কোটি, বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৮২২ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি আরও দুটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি যথাক্রমে ১ হাজার ৯৬৭ কোটি ও ৯১৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৬৬৯ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ১৪৮ কোটি এবং পদ্মা ব্যাংকের ১০৫ কোটি টাকা