বিশ্ব পুড়বে তিনগুণ তাপদাহে: গবেষণা

আবহাওয়া breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলছে। যার ফলে ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় সমস্ত প্রাণীকুল। চলতি গ্রীষ্মে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে যে বিপজ্জনক তাপদাহ বয়ে গেছে তা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় তিন থেকে দশ গুণ বেশি আকারে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে আঘাত হানতে পারে। আর এর কারণ মানব সৃষ্ট জলবায়ু সংকট। সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ২৫ আগস্ট কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা

প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে তা খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ তার ফলে জলবায়ুতেও বিস্তর পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশ বা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে।

বর্তমানে গ্রীষ্মকালের কোনো কোনো সময় এখানকার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশিতে পৌঁছাতে পারে। ২০৫০ সালে এই অঞ্চলে বিপজ্জনক তাপদাহ বয়ে যাওয়ার সময় দ্বিগুণেরও বেশি হবে। অর্থাৎ এখন যদি বছরে এক সপ্তাহ তাপদাহ হয়, তখন হবে ১৪ দিনেরও বেশি।

গবেষকেরা আরো বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে এই অসহনীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর প্রভাব হবে আরও ভয়াবহ। যদিও এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য মানুষকেই বড় অংশে দায়ী করা হয়েছে।

এছাড়া গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ১২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে গেলে সেটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি খুব কমই ঘটে। এই শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে এই ধরনের তাপপ্রবাহ প্রতিবছর এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের বলা হয়, আগামী শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

এই অনুসিদ্ধান্তের নিরিখেই গবেষণাটি করা হয়। যদিও ওই সময় দেশগুলো তাপমাত্রা ১.৫° সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছিল। এছাড়া সম্প্রতি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, যুক্তরাজ্যে খুব কম লোকের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, ট্রেনগুলো বাতিল করা হয়েছে এবং একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে তাপদাহের কারণে গলে গিয়েছিল।

দেশটিতে তাপমাত্রা চলতি বছরই ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। গবেষকদের অনুমান অনুযায়ী, ২১০০ সালের সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভাবনা শুধু শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। হার্ভার্ডের জলবায়ু বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার লেখক লুকাস জেপেটেলো বলেছেন, এটি এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি। এর ফলে কয়েক বিলিয়ন মানুষ নিয়মিতভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রার তাপের সংস্পর্শে আসতে চলেছে। সূত্র: সিএনএন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *