বিক্রি বন্ধ তারপরও টিসিবির পণ্য নিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন লাইনে

বাংলাদেশ

নিউজ ডেষ্ক- নিত্যপণ্যের বাড়তি দরে অসহায় ভোক্তা। চাল-ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, মাছ-মাংস, সবজিসহ সব পণ্যই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারে গিয়ে মানুষের হিমশিম অবস্থা। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে আসছিল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তা বন্ধ। কিন্তু বহু সাধারণ মানুষকে এখনো নির্ধারিত স্থানে ট্রাকসেলের সামনে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিক্রি বন্ধের বিষয়টি এক পর্যায়ে জানার পর হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যাচ্ছে। রমজান সামনে রেখে ১০ মার্চ থেকে ফের টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হবে। রমজানে এক কোটি মানুষের হাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার টার্গেট রয়েছে সরকারের। ট্রাকসেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, নিত্যপণ্যের অসহনীয় দাম, তাই টিসিবির পণ্যই এখন আমাদের কাছে ‘স্বর্গের আহার’।

টিসিবি বলছে, অষ্টম দফায় ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিসিবি পণ্য বিক্রি করেছে। ১০ মার্চ থেকে রোজা উপলক্ষ্যে আবার বিক্রি শুরু হবে। চলবে ২৬ রমজান পর্যন্ত। রোজায় এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি, পেঁয়াজ ও খেজুর পৌঁছে দেওয়া হবে। আর প্রথম রমজান থেকে বিক্রি করা হবে ছোলা। ইউনিয়ন পর্যায়েও এসব পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা সারা দেশে বিক্রি হলেও ঢাকায় এসবের সঙ্গে বিক্রি হবে পেঁয়াজ ও খেজুর। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সবুজবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে লাইন ধরে বসে আছেন বেশ কয়েকজন। তারা সবাই টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায়। নিয়মিত বিরতি দিয়ে একে একে যুক্ত হয়েছেন আরও অনেকে। কিন্তু ট্রাক আসছে না। ট্রাকের দেখা না পেয়ে অনেককে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়। কথা হয় ফজিলা বেগমের (৪৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে বাজারের চেয়ে কম দামে সয়াবিন তেল, ডাল, পেঁয়াজ ও চিনি পাওয়া যায়। তাই এসেছি। বাজারের পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই। টিসিবির পণ্য এখন আমাদের কাছে ‘স্বর্গের আহার’। প্রতিবেদকের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রি আপাতত বন্ধের কথা জানার পর তিনি বলেন, ভাই আমরা তো আর জানি না। আমরা এসে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছি। ফজিলা বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই সামনে এসে মোসাম্মত ফাতেমা (৪৫) বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আয় তেমন একটা নেই। কিন্তু বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম অনেক বেশি। এক কেজি চাল কিনতে ৫০ টাকার ওপরে খরচ হয়। তেলের দাম ১৮০ টাকা লিটার। কিন্তু এখানে ১১০ টাকায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রতি কেজি ডাল কিনতে বাজারে ১১০-১২০ টাকা লাগে; কিন্তু ট্রাকে ৬৫ টাকায় পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৩০ টাকায় পাওয়া যায়। তাই আমাদের কাছে এই পণ্যের মূল্য অনেক। যুদ্ধ করে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে হয়। অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যায় না। যখন পাওয়া যায়, তখন ‘স্বর্গের আহারের’ মতোই লাগে। কিন্তু দুদিন ধরে ট্রাক আসছে না। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব ও মতিঝিল এলাকায়ও টিসিবির বিক্রয় স্থানে অনেককেই ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, আমরা রমজান উপলক্ষ্যে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিতে চাই। এজন্য দুই দফায় পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রথম দফায় ১০ মার্চ থেকে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডাল বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় দফায় প্রথম রমজান থেকে ছোলা বিক্রি শুরু করব। আর এই বিক্রি কার্যক্রম ২৬ রমজান পর্যন্ত চলবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এক কোটি পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে, সেখান থেকে ৩০ লাখ পরিবারকে বাছাই করা হয়েছে। বাকি ৭০ লাখ পরিবারের তালিকা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন প্রস্তুত করছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে-রমজানজুড়ে অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। যাতে তারা স্বস্তিতে রমজান ও ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন। এক কোটি পরিবারকে পণ্য দিতে পারলে দেশের অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এবার রোজায় অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের কালোবাজারি না হয়, সেদিকে তদারকি করা হবে। কারণ টিসিবি অসহায় মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে। আর এই কার্যক্রমে কেউ অসাধু পন্থার চিন্তা করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *