নিউজ ডেষ্ক- মরিচের রাজ্য বগুড়ায় ভোজ্যতেল সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। লাভজনক চাষ হওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ করছেন এখানকার কৃষকরা। ২৫০ টাকা কেজির কোলেস্টরলমুক্ত ভোজ্যতেল বাণিজ্যিকভাবে সফল করেছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৮ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। বীজ আকারে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ টন। বাজারে সূর্যমুখী বীজের চাহিদা বাড়ায় কৃষকও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদন হয়। এ তেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার আড়াইশ টাকা করে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় স্থানীয় চাষীরা সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে সূর্যমুখী আবাদ হলেও পর্যায়ক্রমে তা আরো কয়েকটি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়।
কৃষিবিদরা বলছেন, সূর্যমুখী বীজ রোপণের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষক ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে প্রায় সাত মণ বীজ পাওয়া যায়। এ বীজ ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। কৃষি কর্মকর্তারা সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেল বাজারের অন্যান্য তেলের চেয়ে ভালো বলে দাবি করেছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলীর জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাফিউল আলম জিকোর পরামর্শে তিনি কৃষি অফিস থেকে সার ও বীজ সংগ্রহ করে জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপেজলার উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাফিউল আলম জিকো জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার-ওষুধও কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চাষ বৃদ্ধি পেলে এ বীজ আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, শরীর সুস্থ রাখতে সূর্যমুখী তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বছর কৃষি প্রণোদনার আওতায় সব উপজেলায় ৩৫০ চাষীর মাঝে সূর্যমুখী বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলায় সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হেক্টর, যার শতভাগ অর্জিত হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন জানান, এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ। এর বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গত বছর বগুড়া জেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল। দিন দিন সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।