নিউজ ডেষ্ক- আলু সংরক্ষণের অভাবে আমাদের দেশের চাষিদের বড় লোকসান গুণতে হয়। হিমাগারে রাখা ছাড়া দেশী আলু খাওয়ার জন্য অনেকেই বাড়িতে রেখে দেন। এরমধ্যে অনেকাংশ পেচে নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আবু হোসেন বাড়িতে বালু দিয়ে দীর্ঘদিন আলু সংরক্ষণের কৌশল জানিয়েছেন।
এই কৃষি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে আলুর তাপমাত্রা বিষয়ে জানান, আলু একটি স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল ফসল, যা বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। আলু চাষের জন্য হালকা প্রকৃতির মাটি; অর্থাৎ দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। আলু চাষের জন্য তাপমাত্রা ও আলোর প্রভাব খুবই বেশি।
দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে গেলে ফলন কমে। আবার ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে গেলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এ জন্য আলু লাগানোর সময় যেন ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
আলু সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি জানান, যাঁরা হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি, তাঁদের আলু নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত আলু বাড়িতেই ঠান্ডা জায়গায় বালু দিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। বাড়িতেও অনায়াসে দুই থেকে তিন মাস সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ ছাড়া হিমাগারের বিকল্প হিসেবে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি অহিমায়িত ঘর ব্যবহারের মাধ্যমেও আলু সংরক্ষণ করে কৃষক লাভবান হতে পারেন। হিমাগারে এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। কৃষকেরা বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করলে খরচ পড়ে প্রতি বস্তা মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা।
আলু সংরক্ষণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সঠিক সময়ে সংগ্রহ। পরিপক্ব হলেই তুলতে হবে। এ জন্য ৭ থেকে ৮ দিন আগে গোড়া থেকে গাছ কেটে ফেলা দরকার। বৃষ্টি কিংবা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আলু তোলা যাবে না। প্রখর রোদেও আবার আলু তোলা ঠিক নয়। এতে ব্যাকহার্ট রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তোলা শেষে বস্তায় ভরে দ্রুত বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কারণে জমিতে রাখতেই যদি হয়, তাহলে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকনা খড়কুটো বিছিয়ে কিংবা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বাড়িতে এনে স্বাভাবিক বাতাস চলাচল করে, এমন শুকনা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা দরকার।
তাপ বের হওয়া ও বায়ু চলাচলের উপযোগী করে ঘর তৈরি করতে হবে। খড়কুটো, ছন এসবের ছাউনি ও বাঁশের চাটাইয়ের বেড়ার ঘরে মাটি থেকে একটু উঁচুতে মাচা তৈরি করে দিতে হয়। এর ওপর স্তূপ করে আলু সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি স্তূপের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১ মিটার এবং প্রশস্ত হবে ২ মিটার। এ ছাড়া তাক বানিয়েও আলু রাখা যায়। বাঁশ বা বেতের ঝুড়িতেও রাখা যাবে। নিজেদের থাকার ঘরে মাচায় বা তাক বানিয়ে, এমনকি চৌকির নিচে শুকনা বালুর ওপর আলু রাখা যাবে। আলুর রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধে নিম, নিশিন্দা, বিষ কাটালি ইত্যাদির পাতা গুঁড়া করে আলুর স্তূপে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে কীটনাশক দেওয়া যাবে না। এভাবে অন্তত চার মাস আলু সংরক্ষণ করা যায়। আলু চাষিদের পরামর্শ হিসেবে তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হলেও রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলু না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। তাই কৃষকদের হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নির্ভর না করে বিদেশে রপ্তানি উপযোগী ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য উন্নত জাতের আলু চাষে মনোযোগী হতে হবে।