নিউজ ডেষ্ক- আসন্ন রমজান মাস ঘিরে দেশে এসেছে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এবং খেজুর। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে দুটি দেশ থেকে ছোলা আসলেও আটটি দেশ থেকে এসেছে হরেকরকম খেজুর। চাহিদার তুলনায় দেশে যথেষ্ট পরিমাণে খেজুর-ছোলা আসলেও পাইকারি বাজারে দাম উঠতির দিকে রয়েছে। কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন আমদানিকারকদের গুদামজাত করাকে। তাছাড়া বিক্রি বেশি হচ্ছে, তাই দামও বাড়তির দিকে বলে অভিযোগ অনেকের।
এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রতিবছর রমজান এলেই অজানা কারণে ব্যবসায়ীরা প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে রমজান ঘিরে দাম যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য বাজারে কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে দেশে ছোলা এসেছে দুই লাখ ২০ হাজার ৩৬৪ টন। এসব ছোলা আমদানি হয়েছে দুটি দেশ থেকে। রমজান ঘিরে এ বছর সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। এছাড়াও আমদানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
আবার গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে দেশে খেজুর এসেছে ৬০ হাজার ৪১৪ টন। ছোলা দুই দেশ থেকে আসলেও খেজুর এসেছে আটটি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, সৌদি-আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, জর্ডান, তিউনিশিয়া ও পাকিস্তান। বাহারি রকমের এসব খেজুর ইতোমধ্যে সয়লাব হয়েছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ নাছির উদ্দিন বলেন, দুই দেশ থেকে ছোলা এবং আটটি দেশ থেকে প্রচুর খেজুর এসেছে। গত বারের তুলনায় এবার আরও বেশি পরিমাণে এসেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার আবদুল হান্নান বলেন, ছোলা-খেজুরসহ রমজান ঘিরে প্রচুর ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। তাছাড়া এখনো আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজারে দেখা গেছে প্রকারভেদে মণপ্রতি ছোলা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যার বাজারমূল্য ছিল দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ১০ কেজি ওজনের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে একই ধরনের খেজুরের বাজারমূল্য ছিল ৮৬০ থেকে ৮৯০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দুটি পণ্যের মূল্যই বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, অনেক সময় পর্যাপ্ত আমদানি হলেও গুদাম থেকে কম আসে। তাছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা একটু দাম বাড়িয়ে দেন। আবার বিক্রি একটু বেশি হলেও দাম বেড়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি রমজানের আগে যেন আর দাম না বাড়ে। এটা আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরও বলছি।
ছোলা আমদানিকারক ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ছোলার দাম সামান্য বাড়ার কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। তাছাড়া বাজারে চাহিদাও একটু বেড়েছে। তবে সময়ের ব্যবধানে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলম বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়া বাকি সব ভোগ্যপণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ আছে। রমজান ঘিরে যাতে দাম না বাড়ে সেজন্য আমরাও চেষ্টা করছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফালাভের ইচ্ছার কারণে দাম বাড়ছে। তাছাড়া দাম বাড়ছে কেন- বাজারে এটা জিজ্ঞেস করার লোক নেই। তাই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার বলেন, খুচরাও পাইকারি বাজারে আমাদের নজরদারি রয়েছে। রমজান ঘিরে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।