বাজারে ভোজ্য তেলের কোনো সংকট নেই। যে পরিমাণ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেল বর্তমানে দেশের বাজারে রয়েছে তাতে আগামী রমজান মাস ও ঈদ পর্যন্ত বাজারে তেলের কোনো সংকট হবে না।
আজ সোমবার ভোজ্য তেল পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এই প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে বৈশ্বিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এর উপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার ও ভোজ্য তেলের জন্য বন্ডেড ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভোজ্য তেল আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মোতাবেক ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে। যে পরিমাণ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল বর্তমানে বাজারে রয়েছে তাতে রমজান পর্যন্ত ভালভাবে চলে যাবে। কোনো সংকট হবে না। তবে তারা বৈশ্বিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এর উপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশ ভারত তিনবার শুল্ক ও ভ্যাট সমন্বয় করেছে। যেহেতু আমরা করোনার মতো একটা মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তাই আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষিতে দেশে ভোজ্য তেলের মূল্য সমন্বয়ের জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অন্তত আগামী তিন মাসের জন্য ভোজ্য তেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, তেলের ঘাটতি না থাকার পরও সয়াবিন তেলের দামবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্য সবাইকে ভোজ্য তেল বিক্রি করতে হবে। যেহেতু আপনারা বলছেন, তেলের কোনো সংকট নেই। সুতরাং কেউ মজুদ করার চেষ্টা করবেন না। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াবেন না।
জসিম উদ্দিন বাজার নিয়ন্ত্রণে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি একই সাথে বাজার কমিটিগুলোর তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার ওপর জোর দেন। এ ছাড়া খোলা তেল বিক্রি বন্ধ ও আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল বন্ডের মাধ্যমে ছাড় করার পদ্ধতি চালুর পক্ষে মতো দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
মতবিনিময় সভায় ভোজ্য তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, মিলমালিকদের পক্ষ থেকে বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন তেল সিটি গ্রুপের কারখানা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে কোরবানি পর্যন্ত ভোজ্য তেলের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহবান জানান।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম জানান, বাজারে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। তবে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে সরকার ২৫ থেকে ২৭ টাকার ভ্যাট পায়। বর্তমান সময়ে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মাওলা তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য মিল মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মিলগেটে অপেক্ষার জন্য প্রতি ট্রাক বাবদ দৈনিক ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।