বাকরুদ্ধ বাবা, বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন হাদিসের মা

বাংলাদেশ

নিউজ ডেষ্ক- ইউক্রেনে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ তে রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের (২৯) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের দাবি, যে করেই হোক হাদিসুরের মরদেহ বাড়িতে এনে দেওয়ার।

নিহত হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার ভাই-বোনের মধ্যে হাদিসুর রহমান দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ৪৭ ব্যাচে লেখাপড়া শেষ করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন হাদিসুর।

স্বজনরা বলেন, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে ৭ বছর ধরে চাকরি করেন অরিফ। জাহাজ থেকে আরিফের এক বন্ধু ফোন করে জানায় ইউক্রেনের সময় বুধবার ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাদের জাহাজে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় রকেট হামলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিহত হয়েছেন।

পাঁচদিন আগে হাদিসুর তার মা আমেনা বেগমকে মোবাইলে জানিয়েছিলেন যুদ্ধে আটকা পড়ার কথা। তখন থেকেই শঙ্কায় ছিল পরিবারটি। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো।

হাদিসুরের এক স্বজন বলেন, এখন দুশ্চিন্তায় আছি মরদেহ দেশে আনব কিভাবে। সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে যাব মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে।

নিহতের ছোট ভাই তারেক জাগো নিউজক বলেন, বুধবার সকালে সবশেষ হাদিসের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। হাদিস ইউক্রেনে আটকে থাকার কথা আগেই পরিবারকে জানিয়েছিলেন। তিনি পরিবারের সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যেন নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন।

হাদিসুরের মা আমেনা বেগম আহাজারি করে বলেন, ‘বাজানে মোরে কইছে, এইবার বাড়িতে আইয়া ঘর উডাইবে। আর ভাঙা ঘরে থাহন লাগবে না মা। ঘরহান উডান অইলে বিয়া কইরা বউ ঘরে আনবে। মোর পোলাডার লাশটা আইন্না দ্যান, মোর পোলাডারে মুই একনজর দেকমু, আর কিচ্ছু চাই না ‘

হাদিসের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িভর্তি মানুষ। বাকরুদ্ধ বাবা, বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পড়ার পর থেকেই তাদের পরিবারের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সন্তানের মরদেহ পাওয়া নিয়ে এখন শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

বরগুনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নিহত হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্যবোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *