নিউজ ডেষ্ক-নানা পদক্ষেপেও ডলারের বাজারের অস্থিরতা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ডলার নিয়ে কারসাজি হওয়ার আশঙ্কা করছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। তাই চলমান সংকটকে পুঁজি করে ডলার নিয়ে কেউ কোনো ধরনের কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছে আর্থিক খাতের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি লাইসেন্স বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ডলারের বাজারের অস্থিরতার পেছনে যেসব মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ী ও ব্যাংক দায়ী তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করলে গভর্নর এমন হুশিয়ারি দেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে একই দিন সকালে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। কয়েক মাস ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু এই দামে কোথাও মিলছে না ডলার। গত মঙ্গলবার খোলাবাজারে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১২ টাকায় ওঠে। তার একদিন পর বুধবার ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ডলারের এই দামেই এলসির পেমেন্ট করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে পণ্য আমদানির। এ ছাড়া সংকটের কারণে বর্তমানে অনেক ব্যাংক এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে।
গতকালের বৈঠকে ডলারের দামে এই অস্থিরতা ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে গভর্নরকে অনুরোধ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ডলারের দাম চড়া করে যেসব মানি চেঞ্জার ও ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘জড়িতদের চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলও করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ডলার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিন বাজারে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ কাজে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলার নিয়ে যারা কারসাজি করেছেন বা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছি। এ ছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে ঋণের সুদের সীমা তুলে দেওয়ার করা হয়েছে। তবে ঋণের সীমা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই ভাবছে না বলে এফবিসিসিআইকে জানানো হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে সকালে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্র্যক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থার অভাব ও অকার্যকারিতা এবং এর সঙ্গে বাজার অস্থির করে সেখান থেকে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। তবে কোন গোষ্ঠী বাজার অস্থির করছে তাদের নাম বলেননি। তিনি বলেন, চলমান ডলার বাজারের অস্থিরতায় হয়তো কোনো ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থা বাড়াতে হবে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ক্ষেত্রে চালু করতে পারলে সংকট উত্তরণ সম্ভব হবে। এবিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বর্তমানে অচল। এটিকে সচল করতে হবে। তবে আমাদের মতো দেশে ডলারের বাজার একেবারে ফ্রি ফ্লোর করা সম্ভব না। কিছুটা ম্যানেজ করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনঃগঠনে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাস্টার সার্কুলারের ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদি ব্যাংকে সুশাসন না থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়েও গভর্নর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০টা সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা করে পরিদর্শন ও তদারকি আরও বাড়ানো হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।