নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে করোনা মহামারির কারণে দেশটিতে নতুন করে কর্মী নিতে চাচ্ছে না সিঙ্গাপুর সরকার। তবে করোনাকাল কেটে গেলই সিঙ্গাপুরে শ্রমিক নেওয়ার হিড়িক পড়ে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ জন্যই বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবা খাতে আরও দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে এ অনুরোধ করেন তিনি।
ড. মোমেন চলমান কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের প্রতি সিঙ্গাপুর সরকারের ক্রমাগত সহায়তায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আরও পরামর্শ দেন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে তাদের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবা খাতে আরও দক্ষ কর্মী নিয়োগের কথা বিবেচনা করতে পারে।
কর্মকর্তা জানান, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে তীব্র কর্মী সংকটে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে দেশটি। ফলে সিঙ্গাপুরে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া থেকে শ্রমিক সরবরাহ প্রায় বন্ধই। এ অবস্থায় অভিবাসী শ্রমিকনির্ভর আবাসন ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখতে বিদেশী কর্মী নিয়োগের আইনগুলো সাময়িকভাবে শিথিল করেছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো যার সুফল পাবেন সিঙ্গাপুরে বর্তমানে কর্মরত ও যেতে আগ্রহী বাংলাদেশী কর্মীরাও। সিঙ্গাপুরের নির্মাণ ও মেরিন সেক্টরের কর্মীর অভাব চরমে। একজন্য নতুন বিদেশী কর্মী নিয়োগে ন্যূনতম দক্ষতার বাধ্যবাধকতা ছিল সেটি আর থাকবে না। ফলে এখন থেকে অদক্ষ কর্মীদেরও নিয়োগ দিতে পারবে এসব খাতের কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও চীন থেকেই এসব খাতের কর্মীদের নিয়োগ দিতে হবে। অন্যদিকে যেসব কর্মীর সিঙ্গাপুরে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের নিয়োগ ও কাজের অনুমতিপত্র বরাদ্দের বিষয়ে কোম্পানিগুলোর জন্য আর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার সীমা থাকছে না।
প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে বেতন নিয়ে বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেও। অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে বিবিএসের ‘অভিবাসন ব্যয় জরিপ’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিদেশে যাওয়ার আগে চুক্তির সময় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যে বেতনের কথা বলে, প্রকৃতপক্ষে কর্মীরা সে অনুযায়ী বেতন পান না।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অভিবাসী কর্মীদের সঙ্গে এজেন্সি এবং নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তি অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে একজন কর্মীর মাসিক গড় বেতন হওয়ার কথা ৪৬ হাজার ৮৯৫ টাকা। তার পরে যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো বেতন পেয়ে থাকেন বিদেশি শ্রমিকরা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী রফতানি হতো সিঙ্গাপুরে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে গত বছর থেকে কর্মী পাঠানো কমতে শুরু করে। কোভিডের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৪৯ হাজার ৮২৯ বাংলাদেশী বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সিঙ্গাপুর যান। এছাড়া ২০১৮ সালে ৪১ হাজার ৩৯৩ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪০১, ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭৩০ ও ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫২৩ জন বাংলাদেশী শ্রমিক দেশটিতে যান।