সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ দিয়েছেন কৃষকেরাই। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন তাঁরা। নির্বিঘ্নে হাওরের ধান ঘরেও তুলেছেন। কিন্তু বাঁধের কাজ করার ছয় মাস পরও বকেয়া বিল না পেয়ে বিপাকে কৃষকেরা। সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৪২টি হাওরে এবার ৬১৯ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে। ৮১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা এ কাজে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় সুবিধাভোগী ও জনপ্রতিনিধিরাসহ কৃষকেরাই ছিলেন পিআইসির সদস্য। কাজ শেষ হতেই বিল পরিশোধ করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটির একাংশ আটকে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তাদের আচরণ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাঁধ নির্মাণকারীরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁধ নির্মাণের বকেয়া প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা আটকে রাখা হয়েছে ছয় মাস ধরে। অথচ কাজ সঠিকভাবে না হলে পিআইসি সদস্যদের নানাভাবে জরিমানা করেন, জেল দেন প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা। তঁাদের চাপে ও ভয়ে সময়মতো কাজ শেষ করতে গিয়ে ঋণ বা সুদে টাকা ধার করেছেন অনেক কৃষক। এখন বিল না পাওয়ায় বেকায়দায় রয়েছেন তাঁরা। বারবার ধরনা দিয়েও বকেয়া টাকা তাঁরা কবে পাবেন, সেটি নিশ্চিত করে কেউ বলছে না।
২০১৭ সালে হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানির পর পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর পিআইসি গঠনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের উপকারভোগীরাই বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সুফলও মেলে। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদক জানালেন, পিআইসি গঠনের ফলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের একটি চক্র নাখোশ। আগে শতকোটি টাকার যে কাজ মাত্র কয়েকজন ঠিকাদার মিলে ভাগ করে নিতেন, সেই কাজ বাস্তবায়ন করছে আট শতাধিক পিআইসি টিম। এ কারণে পিআইসিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কাজের সময় নানা চাপ ও ভয় দেখিয়ে, এরপর বিল বকেয়া রেখে বাঁধ নির্মাণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলছেন, বিল দিতে হয়রানি করায় মনে হচ্ছে এটা পিআইসি বাতিলের একটা ষড়যন্ত্র। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের প্রশ্রয় দিতে গিয়ে হাওরে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছিল। বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব কৃষকেরা নেওয়ায় সেই অবস্থা আর নেই। অতএব, এ কাজে তাঁদের নিরুৎসাহিত করা ও বিল পরিশোধে গড়িমসি করা কোনোভাবে কাম্য নয়। পিআইসি সদস্যদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা হোক।