নিউজ ডেষ্ক- টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় ভিনদেশী ড্রাগন ফলের চাষ বেড়েছে। শখের বসে ড্রাগন বাগান শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই চাষ করছেন ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ মিষ্টি ও সুস্বাদু ড্রাগন ফল। চাষীদের দাবি, বর্তমানে উপজেলার ৩০০ একর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হচ্ছে। আর এতে প্রতি বছর আয় হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। নয়া দিগন্তের ্রেতিবেদক সাজ্জাদ রহমান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত। উপজেলার ড্রাগনচাষী সমিতির দেয়া তথ্য মতে, ঘাটাইলের পাহাড়িয়া এলাকার সাতটি ইউনিয়নে ছোট বড় ৫০টি ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে।
সাগরদিঘী, জোড়দীঘি, লক্ষিন্দর, মাকড়াই, মহিষমারা, গারোবাজার, সরাবাড়ি কাজলা, করিমগঞ্জ, মধুপুরচালা, মুরাইদ, বাসাবাইদ, সিংহেরচালা মোমিনপুর এলাকায় ড্রাগনের বাগান বেশি। চাষ লাভজনক হওয়ায় এখন ঘাটাইল উপজেলার পাশাপাশি পাশের সখিপুর ও মধুপুর উপজেলায়ও ড্রাগন চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও ড্রাগন চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ড্রাগন ফলের আদি নিবাস মেক্সিকো। বর্তমানে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ফল বেশ জনপ্রিয় খাবার হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশেও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা এ ফল।
ক্যাকটাস জাতীয় ড্রাগন ফল গাছ সিমেন্টের খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হয়। ড্রাগনের ফুল সাদা ও লালচে লম্বাটে এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো। এ ফল লাল ও সাদা দুই রঙেরই হয়। গাছ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে তা খাওয়ার উপযোগী হয়। ড্রাগন গাছে বছরে তিন থেকে পাঁচবার ফল আসে। গাছের সঠিক পরিচর্যা করলে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।ভেষজ ও ঔষধিগুণ থাকায় ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়োবেটিকসের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে ড্রাগন ফল। টিএম এগ্রো ফার্মের মালিক ও ঘাটাইল উপজেলার ড্রাগনচাষী সমিতির সভাপতি আবু হাসনাত তালুকদার জানান, ২০১৮ সালে ঘাটাইল উপজেলার কাজলা গ্রামে আমি প্রথম ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি।
বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে আমার ড্রাগনের বাগান রয়েছে। ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ৩০০ একরের উপরে জমিতে ড্রাগনের আবাদ হয়। ছোট বড় মিলিয়ে বাগান রয়েছে ৫০-৬০টি। এক বিঘা জমিতে ৫০০টি চারা রোপণ করা যায়। প্রতি মৌসুমে একটি গাছ হতে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া যায়। টানা ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় ড্রাগন গাছ থেকে। তিনি আরো বলেন, এক বিঘা জমির ড্রাগনের বাগান থেকে খরচ বাদে বছরে লাভ পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর ঘাটাইলে ড্রাগন চাষীরা ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আয় করে থাকে। ড্রাগন ফলের বাগানে হলুদ, পেঁপে, সবজিসহ নানা ধরনের সাথী ফসল আবাদ করা যায়।
উপজেলার সাগরদীঘি গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান শরীফ জানান, তিনি বেইলা গ্রামে দেড় একর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। বাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকে পাইকারী ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের চাইতে শহরে ড্রাগন ফলের চাহিদা বেশী। ঢাকার স্বপ্ন ও আগোরাসহ বিভিন্ন শপিংমলগুলোতে ড্রাগন ফল সরবরাহ করেন চাষীরা।
ড্রাগন চাষী সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার জানান, তিনি গত বছর দুই একর জমিতে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়েছেন। এ বছরই প্রথম ফল এসেছে। এবার তিনি ১০ লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি আরো জানান, ভেষজ জাতীয় এ ফল চাষ লাভজনক। জৈব সার দিয়েই এই ফল চাষ করা যায়। তেমন কোনো ক্ষতিকারক রোগবালাই না থাকায় অতিরিক্ত অন্য কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, পাহাড়ি এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করছে এবং প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে। আমরা ড্রাগন চাষীদের সবসময়ই প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।