ফেনীতে ৩২০০ লিটার তেল প্রতিদিন চুরি হচ্ছে ট্রেন থেকে

দেশজুড়ে led

অনুমোদিত কিছু স্টেশন ছাড়া অন্য কোথাও থামার নিয়ম না থাকলেও ফেনীর শর্শদী স্টেশনে ১০-১৫ মিনিট থামছে পণ্যবাহী ট্রেন। এসব ট্রেন থেকে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ লিটার তেল সরাচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৫৬ হাজার। মাসিক হিসাবে যার দাম দাঁড়ায় প্রায় ৭২ লাখ টাকা।

শর্শদী স্টেশনের একজন কর্মকর্তা তেল চুরির বিষয়টি পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিত আকারেও জানিয়েছেন। কিন্তু তেল চুরির সিন্ডিকেটটি প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করেন তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৮টি মালবাহী ট্রেন ছেড়ে যায়। যাওয়ার আগে প্রতিটি ট্রেনে তেল ভর্তি করা হয়। ট্রেনের গার্ড-চালক ও সিজিপিওয়াইর কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে অনেক ট্রেনে বাড়তি তেল ভরা হয়। তারপর শর্শদী স্টেশনের আউটার সিগন্যালের মূল পয়েন্টে থামার পরপরই ট্রেনের ইঞ্জিনে পাইপ লাগিয়ে ড্রামে করে তেল চুরি করে সিন্ডিকেটটি। একটি ট্রেন থেকে কম হলেও দুই ড্রাম বা ৪০০ লিটার তেল সরানো হয়।

একটি ট্রেনের ইঞ্জিনে ৩ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল নেওয়া যায়। সে হিসাবে ৮টি ট্রেন থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ লিটার বা ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার তেল চুরি করা হচ্ছে। যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ লাখ টাকা। এ কারণে রেলওয়ে লোকসান থেকে বের হতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

স্থানীয় তিনজন প্রভাবশালী তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কিছু করতেও পারছেন না।

রেলের নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে রেলের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। নির্দিষ্ট সংখ্যক বগি নিয়ে একটি ট্রেন চললে যে পরিমাণ তেল খরচ হয়, সেটার একটা হিসাব ধরে যুগের পর যুগ চলছে। মৌখিক এ হিসাবকে পুঁজি করে চোর চক্রের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী চুরি করছে তেল। মূলত চুরির কারণেই তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই রেলের।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অভিযান চালিয়ে ট্রেন থেকে তেল চুরির সত্যতা পেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮০০ লিটার তেল চুরির প্রমাণ পায় দুদক। তারপরই আরএনবির এক সদস্য ও রেলের কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। চুরিতে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে জানিয়েছিলেন অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক।

তেল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে শর্শদী স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় তিনজন ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় সবকিছু জেনেও প্রশাসন কিছু করতে পারছে না। তেল চুরির বিষয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত আকারে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে ফেনীতে রেলের ১৫শ লিটার চোরাই তেলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চোরের দল যত প্রভাবশালীই হোক তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, শনিবার চুরি হওয়া মালবাহী রেলের সংশ্লিষ্ট চালককে শনাক্ত ও গ্রেফতারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফিরোজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা বিষয়টির খবর নিচ্ছি। যত প্রভাবশালী হোক সত্যতা পেলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *