নিউজ ডেষ্ক- কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত কয়েক বছর ধরে পাট চাষের অনূকূল আবহাওয়া থাকায় পাটের ভালো ফলন পেয়েছিলেন চাষিরা। পাশাপাশি পাট ও পাট কাঠির ভালো দাম এবং চাহিদা থাকায় পাট চাষে ঝুঁকছেন ফুলবাড়ীর কৃষকরা।
গতবারের মতো এবারেও পাট চাষাবাদে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা। তবে, চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের অসময়ে পাটবীজ ও সার বিতরণ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন চাষিরা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষামত প্রাণকৃঞ্চ গ্রামের পাটচাষি আশরাফুল আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে পাট চাষাবাদ করা দেখে আসছি। বৈশাখের এমন দিনে পাটক্ষেতে ২/৩ বার নিড়ানি দিতে হয়। আমরা এবারে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে বীজ বপন কাজ শেষ করেছি। পাট ক্ষেতে ২ বার নিড়ানিও দিয়েছি। আর এখন শুনছি বিনামূল্যে পাট চাষাবাদের জন্য বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। এ বীজ ও সার কাকে দিবে? আমরা যারা বরাবরই পাট চাষাবাদ করি সবাই তো কবেই বীজ বপন কাজ শেষ করেছি। সরকারের দেয়া বীজ ও সার এখন কোথায় যাচ্ছে? যারা নিচ্ছে, তারা কি আসলেই পাট চাষি?
আরেক পাটচাষি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমি এবার বীজ ও সার কিনে ২ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছি। আমি প্রতিবছরই পাট চাষ করি সরকারি বীজ সার আমি তো পাই না!
সদর ইউনিয়নের প্রাণকৃঞ্চ, নাগদহ ও দাশিয়ার ছড়া গ্রামের পাটচাষিদের জমিতে গিয়ে দেখা গেছে তারা পাট ক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন। প্রাণকৃঞ্চ এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান, মজিবর রহমান নাগদহ এলাকার ইউসুফ আলী, জয়নাল আবেদীন বলেন, এখন পাট অধিদপ্তর কি কারণে বীজ ও সার বিতরণ করছে।
তারা কি জানে না কখন জমিতে পাট বীজ বপন করতে হয়? এখন যাদের বীজ ও সার দেয়া হচ্ছে তারা কি জমিতে বীজ বপন করতে পারবেন? বৈশাখের শুরু থেকে বৃষ্টির কারণে তো জমিতে পানি জমে আছে। তাহলে সরকারি বীজ ও সার বিতরণ করে লাভ কি? আমরা প্রকৃত পাটচাষিরা কেন প্রতিবছর সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকবো?
সরেজমিন ঘুরে এসব চাষিদের সাথে কথা হলে তারা প্রত্যেকে উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার অসময়ে পাটবীজ ও সার বিতরণ কাজে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা সোনালি আঁশ ক্ষ্যাত পাটের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আগামীতে সময় মত বীজ ও সার বিতরণের দাবি জানান। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে বীজ ও সার বিতরণে উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক উপসহকারী কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে পাট চাষাবাদ উপযোগী জমিতে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়েই কৃষকেরা বীজ বপন কাজ শেষ করেছেন। এখন বেশিরভাগ কৃষক ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমরা তাদের প্রযোজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।
তারাও জানান, এখন পাটবীজ ও সার বিতরণ অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া এ কার্যক্রমে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ জানিয়েছেন, উপজেলার ৩ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ১কেজি করে পাটবীজ এবং ৬ কেজি এমওপি ও ৬ কেজি টিএসপি সার বিতরণ করা হচ্ছে। এ বিতরণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আমি আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ কাজ শেষ হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় এবারে ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চাষিরা ৫২০ হেক্টর জমিতে পাটবীজ বপন কাজ শেষ করেছেন।