বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়ার মাছের চাষ শুরু হযেছে। সাপের মতো দেখতে এ মাছটি চাষ করে ইতোম্যধ্যে লাভবান হচ্ছে উদ্যোক্তারা। দিনাজপুরের বিরামপুরের পুতুল রানী রায় কুঁচিয়া চাষে জীবন পাল্টে দিয়েছেন।
পুতুল রানী রায় তার বাড়ির পাশে পতিত জমিতে চৌবাচ্চা করে প্রথম ছোট আকারে কুঁচিয়ার চাষ শুরু করেন। পরে চাহিদা দেখে আকার আরও বাড়িয়েছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রথমে অল্প করে শুরু করেছিলাম। তারপর দেখলাম লাভ ভালই হচ্ছে। নিজেরাই খেতে পারছি আবার টাকাও আয় হচ্ছে। পরে আমি আরও কয়েকটি চৌবাচ্চা তৈরি করেছি। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় ২০১৮ সালে তিনি প্রথমে দুইটি চৌবাচ্চা করে কুঁচিয়া চাষ শুরু করেন। সেই সঙ্গে কুঁচিয়ার খাবার হিসাবে দেয়ার জন্য পাশেই দুইটি রিং স্ল্যাবের ভেতরে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কেঁচোর চাষাবাদও শুরু করেন।
”কুঁচিয়া তো রাক্ষুসে ধরনের মাছ, কিন্তু থাকে একেবারে মাটির নীচের দিকে। সেখানে কিছু পাইপ দিয়ে রেখেছি, ওরা সেই পাইপের মধ্যে ঢুকে থাকে। ওদের খাবারের জন্য পুকুরে তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছি। সেগুলোর বাচ্চা হলে কুঁচিয়া খেয়ে ফেলে। তেলাপিয়া বড় হলে আমরাও খাই। এছাড়া খাবার হিসাবে কেঁচো দেই”, বলছিলেন মিসেস রায়।
কুঁচিয়ার খাবার হিসাবে দেয়ার জন্য তিনি কেঁচোর চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন সেটাই তার আরেকটা আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে কেঁচো আর কম্পোস্ট সার বিক্রি করেছি প্রায় এক লাখ টাকার। আর কুঁচিয়া তো আমরাও ধরে খাই। না হলে কুঁচিয়া বিক্রি হতো ২০/৩০ হাজার টাকার। আমার স্বামী চাষাবাদ করে। কিন্তু এখন আমার ইনকাম আমার স্বামীর চেয়েও বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিনাজপুরের গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে তারা ৩০০ পুকুর বা চৌবাচ্চার মতো তৈরি করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম অনেকে আগ্রহী হয়নি। পরে অন্যদের লাভ করতে দেখে তারা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে এখানে যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে, তারা নিজেরাও কুঁচিয়া খায়। ফলে চাষ করার কারণে একদিকে যেমন তাদের একটা পছন্দের খাবার পাচ্ছে, আবার ঘরে টাকা আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি জানান, নয় হাজার টাকা বিনিয়োগ করে কেউ যদি ছোট আকারেও কুঁচিয়ার চাষাবাদ করে, তাহলে বছরে অন্তত ছয় হাজার টাকা লাভ থাকবে। কুঁচিয়ার খাবার হিসাবে তেলাপোকার পোনা আর কেঁচো দেয়া হয়। ফলে একদিকে তেলাপিয়াও তারা পাবে, আবার কেঁচো বা কম্পোস্ট সার বিক্রি বাড়তি লাভ আনবে।
দিনাজপুরের কুচিয়ার ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া বলছেন, ‘এখন বছরে দেড়শো দুইশও মণ কুঁচিয়া বিক্রি করি। কিন্তু চাহিদা আছে আরও অনেক বেশি। যদি দুই হাজার মণ কুঁচিয়াও পাওয়া যায়, তাও বিক্রি হয়ে যাবে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা যত চায়, সবসময় তো সেই জোগানও দিতে পারি না।’
ঢাকার একজন পাইকারি বিক্রেতা ফজলু মিয়া বলছেন, ‘সারাদেশ থেকেই তাদের কাছে কুঁচিয়া আসে। তবে এখনো বেশিরভাগ কুঁচিয়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়। গুটিকয়েক জায়গা থেকে তারা চাষের কুঁচিয়া পান।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০১৯-২০২০ সালে জ্যান্ত ও শুকনো মিলিয়ে মোট কুঁচিয়া রপ্তানি হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলারের বেশি। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে চীনে, এক কোটি ডলারের ওপরে।
বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে, ”বিশ্বে কুঁচিয়া এবং কাঁকড়ার যে চাহিদা আছে, সব তো আমরা দিতে পারছি না। জোগান পাওয়া গেলে আমরা যত রপ্তানি করি, এর চেয়েও বেশি রপ্তানি করা সম্ভব।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা