নিউজ ডেষ্ক- রাজশাহীতে কমেছে গমচাষ। কারণ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর বলছে, পানি সংকটের কথা। পাশাপাশি ফল ও শাক-সবজি জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত পুকুর খনন, সার-কীটনাশকসহ আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছে কৃষি অফিস।
কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের গত তিন বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলার ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওই বছর ২৬ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয় ৯৬ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন গম।
২০২০-২১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয় ২৫ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৯১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন গম। চলতি (২০২১-২২) মৌসুমে গম চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয় ২৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৯৪ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন।
গম গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাব, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে গমের রোগবালাই বেড়েছে। ফলে দিন দিন কমছে গমচাষ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলার গোদাগাড়ীতে ২০২১-২২ মৌসুমে ছয় হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু চাষ হয় পাঁচ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এতে ৬০০ হেক্টর জমির চাষ কমেছে। এছাড়া বাঘায় পাঁচ হাজার ৫২৫ হেক্টর, চারঘাটে পাঁচ হাজার ৪০০ হেক্টর, পবায় দুই হাজার ১৯৫ হেক্টর, তানোরে এক হাজার ৫৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় দুই হাজার ৫১৫ হেক্টর, বাগমারায় এক হাজার ৫৬০ হেক্টর, দুর্গাপুরে এক হাজার ১০ হেক্টর, মোহনপুরে ৮৫ হেক্টর, মতিহারে ৩০ এবং বোয়ালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সব উপজেলায়ই এবার কমেছে গমচাষ।
গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের চাষি আকবর আলী বলেন, গত বছর ৯ বিঘা জমিতে গমচাষ করেছি। তবে গমের বীজ পেলেও সার সংকট, সেচ ও শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় এবার তিন বিঘা জমিতে গমচাষ করেছেন। বাকি ছয় বিঘায় লেবু লাগিয়েছি।
চারঘাট উপজেলার রাউথা নূরের বটতলা এলাকার চাষি গোলাম মোস্তফা ১০ কাঠা জমিতে গমচাষ করেছেন। বাকি দেড় বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলেন পেঁয়াজ, রসুন আর বেগুন।
তিনি বলেন, চারঘাট এলাকায় গত দু-তিন বছর ধরে গমের শীষে সাদা রোগ ও চিটা ধরছে। কৃষি অফিসের পরামর্শ চেয়েও পাওয়া যায় না। এ কারণে গমচাষ কমিয়ে সবজি আবাদ করছি।
বিগত দু-তিন বছরের সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে রাজশাহী গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, করোনাকালীন সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল ভালো উৎপাদন হলেও চাষিরা সেগুলো বিক্রি করতে না পারেনি। ফলে দামও তেমন পাননি। তাই ধান ও গমচাষ করেছি। করোনা-পরবর্তীসময়ে সবজির চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েন। ফলে কমে যায় গমচাষ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, জেলায় বারি-২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ জাতের গমচাষ বেশি হয়। তবে বারি ৩৩ জাতের গমে চাষিদের আগ্রহ বেশি।
গমচাষ কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকটের কারণে ধান ও গমের পানি সেচে প্রচুর অর্থ খরচ হয়। তাই কৃষক পেয়ারা, মাল্টা, লেবু, ড্রাগন ও বল সুন্দরী বরইসহ বিভিন্ন লাভজনক ফসলে ঝুঁকেছেন। এ কারণে গত মৌসুমের চেয়ে এবার এক হাজার ২৬১ হেক্টর জমিতে কমেছে গমচাষ।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে দেশি জাতের গম বিঘাপ্রতি ৮-১০ মণ হারে হয়। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল গম বিঘাপ্রতি ১১-১৩ মণ পর্যন্ত হবে। তবে এ গম চাষের ক্ষেত্রে জমিতে দু-তিনবার সেচ দিতে হবে। এ অঞ্চলে পানির সমস্যার কারণে অনেকে গম চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। পানি সংকট দূর হলে গমচাষ বাড়বে বলে জানান তিনি।