বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রথম অনুবাদক কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ভাই গিরিশচন্দ্র সেন-এর কথা। তবে কেউ কেউ এ বিষয়ে ভিন্নমতও পোষণ করেন।
ইদানিং অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে! বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মতো উন্মুক্ত প্লাটফর্মগুলোতে যেখানে তথ্যের অবাধ বিনিময়ের দরুন সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ভুল-শুদ্ধ নির্বিশেষে যে কোনো ধরনের বক্তব্য, মতামত বা চিন্তা প্রদর্শনের অবারিত সুযোগ রয়েছে।
অবশ্য এটি একদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যেমন একটি বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেছে, অপরদিকে নানা রকম সংশয়, বিভ্রান্তি ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের স্বার্থ আদায়ের পথকেও সুগম করেছে! তবে আশার কথা হলো, এতো কিছুর পরেও যুগসচেতন মানসের কাছে যে কোনো বিষয়ে সত্যাসত্য নির্ণয়ের যে মানদণ্ড বা মাপকাঠি রয়েছে তার সাহায্যে এসব ধূম্রজালের ব্যূহ ভেদ করে প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান ও দ্বার উন্মোচনের প্রচেষ্টাও কিন্তু চলমান।
সত্যি বলতে কি, বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক যে একজন অমুসলিম মনীষী তথা ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ‘ভাই গিরিশচন্দ্র সেন’— এটি একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মানুষের নেতিবাচক প্রচারণার কারণে বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা আপাত বিতর্কিত এই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রয়াজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার প্রয়াস পাবো।
বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই যার নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা কবি—শাহ মুহম্মদ সগীর। তবে তিনি সম্পূর্ণ কুরআনের অনুবাদ করেননি, শুধুমাত্র ‘সূরা ইউসুফ’-এর অনুবাদ করেছিলেন এবং এটি ছিল কাব্যছন্দে রচিত।
এক্ষেত্রে হুবহু সূরাটির অনুবাদও তিনি করেননি। ওই কাব্যে কবিমনের অনেক ভাব-কল্পনার আশ্রয়ও তিনি গ্রহণ করেছিলেন। মূলত ওই অনুবাদে তিনি বাংলা পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দের ব্যবহার করেছেন। তথাপি বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন অনুবাদের এটিই প্রথম উদাহরণ। তাই তাঁকে বাংলায় কুরআন অনুবাদের পথিকৃৎ বলা হয়।
এরপর মধ্যযুগ পেরিয়ে সুদীর্ঘ সময় অতিক্রমের পর ঊনিশ শতকের প্রথম ভাগে রংপুরের মটুকপুর নিবাসী আমির উদ্দীন বসুনিয়া পবিত্র কুরআনের শেষ পারা অর্থাৎ আমপারার কাব্যানুবাদ করেন।
এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ড. অমলেন্দু দে তার ‘বাংলা ভাষায় কোরানচর্চা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রংপুরের অন্তর্গত মটকাপুর নিবাসী আমির উদ্দীন বসুনিয়া ছিলেন এই প্রত্যক্ষ অনুবাদের পথিকৃৎ কিন্তু তাঁর এই তরজমা ও তাফসীর পূর্ণাঙ্গ ছিল না। শুধুমাত্র ‘আমপারা’ অংশের মধ্যেই ছিল সীমিত। ১৮০৮ সালে তাঁর এই অনুবাদ ও তাফসীর দোভাষী বাংলা তথা পুঁথি সাহিত্যের ভাষায় রচিত হয়।’ (পৃ. ১৭)
এ প্রসঙ্গে গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী খান তাঁর ‘পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পবিত্র কোরআনের শেষ পারা (৩০তম পারা) যা ‘আমপারা’ নামে সমধিক পরিচিত। এই পারায় রয়েছে কোরআনের ছোট ছোট সুরাসমূহ এবং নিত্যদিনের নামাজে এই সুরাগুলিই বেশি পড়া হয়।
এজন্য কোরআনের অনুবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষায় আমপারার অনুবাদকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমির উদ্দীন বসুনিয়া এই আমপারা অর্থাৎ কোরআনের ৩০তম পারার কাব্যানুবাদ করেন। এই খণ্ডিত অনুবাদই পবিত্র কোরআনের প্রত্যক্ষ বাংলা অনুবাদের প্রথম উদাহরণ আর এর পথিকৃৎ হলেন আমির উদ্দীন বসুনিয়া।’ (পৃ. ২২)
একই প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান তাঁর পিএইচডি গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা’-তে উল্লেখ করেছেন,‘দূর অতীতে যখন বাংলার মুসলমানদের সাহিত্য-চর্চার বাহন ছিল একমাত্র দোভাষী বাংলা এবং এই দোভাষী বাংলার পয়ার ছন্দে রচিত কাব্য তাদের ভরা-দুপুর ও ঝিল্লিমুখর সান্ধ্য মজলিসগুলি গুলজার ও সরগরম করে রাখতো, তখনকার দিনে আমির উদ্দীন বসুনিয়াকৃত আমপারার তরজমা বাংলা ভাষাভাষী চিত্তকে নিশ্চয়ই আলোড়িত করে থাকবে।’ (পৃ. ৩৯)
এই তিনজন বিশিষ্ট গবেষকের গবেষণাকর্মকে সামনে রাখলে যে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে তাহলো—আমির উদ্দীন বসুনিয়ার হাত ধরেই পবিত্র কুরআনের প্রত্যক্ষ অনুবাদের সূচনা হয় তবে তা শুধুমাত্র আমপারা অংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং সেটি ছিল দোভাষী বাংলা তথা পুঁথি সাহিত্যের ভাষায় রচিত। ধারণা করা হয়, ১৮০৮ অথবা ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে আমপারার এই কাব্যানুবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল।
আগেই বলেছি ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ভাই গিরিশচন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যে পবিত্র কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। মহান সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে একেশ্বরবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন ‘নববিধান’ নামে এক সার্বজনীন ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে গিরিশচন্দ্র সেন ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের ‘নববিধান’ ব্রাহ্মসমাজের প্রচারকব্রত গ্রহণ করেন।
‘নববিধান’ তত্ত্বের মূলকথা ছিল সমন্বয়ধর্ম বা ‘রিলিজিয়ন অফ হারমনি’। ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনই সেসময় গিরিশচন্দ্র সেনকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত গ্রন্থাবলী বাংলা ভাষায় অনুবাদের নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ তাঁর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘কোরানের প্রথম অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেন’-এ লিখেছেন,‘কেশব সেন প্রমুখ চেয়েছিলেন সব ধর্মের একটা সমন্বয় করতে। এই সমন্বয়ের ধারণা থেকেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মকে ভালো করে জানার জন্য তাদের মধ্যে একটা আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি হয়।
অবশেষে এই জানার আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য কেশব সেন উপর্যুক্ত চারটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ মূল বাংলায় ভাষান্তরের জন্য ব্রাহ্মভাইদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করেন। শেষ পর্যন্ত এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন—
১. ইসলাম ধর্ম : গিরিশচন্দ্র সেন
২. হিন্দু ধর্ম : গৌরগোবিন্দ রায়
৩. বৌদ্ধ ধর্ম : অঘোরনাথ গুপ্ত
৪. খ্রিস্টান ধর্ম : প্রতাপচন্দ্র মজুমদার।’ (পৃ. ১৫৪)
অতঃপর ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের অনুপ্রেরণায় সংস্কৃত, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় সুপণ্ডিত গিরিশচন্দ্র সেন পবিত্র কুরআন অনুবাদের লক্ষ্যে আরবী ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য প্রায় ৪২ বছর বয়সে লখনৌ গমন করেন।
সেখানে গিয়ে ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ মৌলভী এহসান আলীর কাছে আরবী ভাষা শেখা শুরু করেন। তিনি তাঁর কাছে প্রায় এক বছর আরবী ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজ অধ্যয়ন করেন। এরপর কলকাতার একজন মৌলভী ও ঢাকার নলগোলার মৌলভীর কাছে তিনি আরবী সাহিত্য ও আরব ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেন।
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি পবিত্র কুরআন অনুবাদের কাজ শুরু করেন এবং ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তা শেষ করেন। প্রায় চার বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ কুরআনের অনুবাদ, মুদ্রণ ও প্রকাশনার কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন এই কর্মবীর এবং ইতিহাসের পাতায় চিরতরে ঠাঁই করে নেন।
এ প্রসঙ্গে মোফাখ্খার হুসেইন খান তার গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘পবিত্র কুরআন প্রচারের ইতিহাস ও বঙ্গানুবাদের শতবর্ষ’-এ উল্লেখ করেছেন,‘বাংলা ভাষায় কুরআনের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ অনুবাদ প্রকাশিত হয় আজ থেকে শতাধিক বছর আগে ১৮৮৫ সালে। অনুবাদক হলেন ব্রাহ্মধর্মের নববিধান মণ্ডলীর ধর্মপ্রচারক গিরিশচন্দ্র সেন।’ (পৃ. ৩৫)
শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন তার ‘কয়েকটি জীবন’-এ লিখেছেন,‘একজন সাধু পুরুষ ছিলেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব এই যে, তিনি ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্রের আদেশে ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থাদি যথেষ্ট নিষ্ঠার সাথে পাঠ করে কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা তর্জমা করেন।’
তবে কেউ কেউ বলে থাকেন, টাঙ্গাইল জেলা নিবাসী বিশিষ্ট আলেম মওলানা নইমুদ্দীন নাকি ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের আগেই পবিত্র কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু এ সম্পর্কিত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই দাবির পক্ষে মোটেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁর অনুবাদটি কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ছিল না।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য ১৭৫৭-১৯১৮’-এ লিখেছেন, ‘নইমুদ্দীনের প্রধান কীর্তি কুরআন শরীফের বাংলা তরজমা। এই কাজে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে তিনি পথিকৃৎ। ১৮৯২ থেকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খণ্ডে খণ্ডে নয় পারার অনুবাদ প্রকাশিত হয়, তার মৃত্যুর পর দশম পারার অনুবাদ গ্রন্থাকারে বের হয়। এরপর তিনি আর অনুবাদ করে যাননি।’ (পৃ. ২৬৮-২৬৯) জানা যায়, নইমুদ্দীনের মৃত্যুর পর তার পুত্ররা ২৩ পারা পর্যন্ত অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
অবশ্য বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ কুরআনের বঙ্গানুবাদক হিসেবে যার নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় তিনি হচ্ছেন চব্বিশপরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার চণ্ডীপুর গ্রামের মওলানা আব্বাছ আলী। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী খান তার ‘পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’-এ লিখেছেন, ‘মাওলানা আব্বাছ আলী প্রথম মুসলমান যিনি বাংলা গদ্যে পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণ বঙ্গানুবাদ করেন।’ (পৃ. ৭২)
এ সম্পর্কে তিনি আরো লিখেছেন, ‘তিনি ১৯০৫ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ—এই ৫ বছরে কোরআনের পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত করেন। তার অনুবাদে প্রতিটি আয়াতের মূল আরবী পাঠের নিচে ছিল শাহ রফিউদ্দীনের উর্দু অনুবাদ এবং তার নিচে ছিল বাংলা অনুবাদ।’ (পৃ. ৭৩)
উপরের আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মওলানা নইমুদ্দীন ও মওলানা আব্বাছ আলীর আগেই ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে, ভাই গিরিশচন্দ্র সেন শুধুমাত্র কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেই ক্ষান্ত হননি, হাদিসগ্রন্থ মিশকাতুল মাসাবিহরও প্রথম বাংলা অনুবাদক তিনি, এমনকি বাংলা গদ্যে লেখা মহানবী (সা.)-এর প্রথম জীবনী রচয়িতাও এই জ্ঞানতাপস!
এছাড়া নবী-রাসূলদের জীবনী, চার খলিফার জীবনী, ইমাম হাসান-হোসেনের জীবনী, ওলি-আউলিয়ার জীবনবৃত্তান্ত (তাপসমালা), শেখ সাদীর গুলিস্তাঁ, বুস্তাঁ’র অনুবাদ (হিতোপাখ্যানমালা), মওলানা রূমীর মসনবীর অনুবাদ (তত্ত্বরত্নমালা) প্রভৃতি মূল্যবান গ্রন্থ বাংলাভাষাভাষীদের উপহার দিয়েছেন গিরিশ।
গবেষকদের মতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত প্রায় ২১টি গ্রন্থসহ অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রন্থের অনুবাদক ও রচয়িতা ছিলেন তিনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ধর্মীয় সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক ‘ভাই গিরিশচন্দ্র সেন’ আজ আমাদের মাঝে অনেকটাই যেন উপেক্ষিত! সকল ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল প্রচারবিমুখ মহান এই জ্ঞানসাধক আমাদের কাছে সবসময়ের জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন। তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্ম আমাদেরকে সবধরনের সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে পরমতসহিষ্ণু এবং পরধর্মের ব্যাপারে উদার মানসিকতা লালনের প্রেরণা যোগাবে—একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
সময়ের পরিক্রমায় তার বেশির ভাগ রচনাই আজ দুষ্প্রাপ্য। এজন্য তাকে জানার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বলা যায়। তার পূর্ণাঙ্গ রচনাবলীই কেবল তার সাহিত্যসাধনার স্বরূপ ও তার অবদানকে সার্বিকভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারে। একবিংশ শতাব্দীর এই সন্ধিক্ষণে নতুন করে আরো একবার ভাই গিরিশচন্দ্র সেনকে অধ্যয়ন ও আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
তার দুর্লভ রচনাবলী যথাসম্ভব উদ্ধার করে ব্যাপকভাবে তা চর্চা করার এখনি মোক্ষম সময় বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং বোদ্ধাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। ১৫ আগস্ট তার মৃত্যুদিবস। ধর্মীয় সৌভ্রাতৃত্বের বিস্মৃত এই সাধককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
লেখকদ্বয়: ড. মোহাম্মদ রেজাউল হোসাইন, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও মো. সাফায়েতুজ্জামান (শাফায়াত তৌসিফ), এমফিল গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।