নিউজ ডেষ্ক- বগুড়া জেলার শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়ছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে অনাবাদি জমি কিংবা সড়কের পাশের পতিত জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদের প্রয়োজনে নেপিয়ার ঘাসের চাষ দিন দিন বাড়ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, এই জেলায় দিন দিন নেপিয়ার ঘাসের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে। ২৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপজেলায় অন্তত ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এর থেকে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। অন্তত ২০০ মানুষ সরাসরি এই ঘাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন।
শেরপুরের মহিপুর এলাকার ঘাস চাষি আপেল মাহমুদ বলেন, প্রথমে জমানো টাকা দিয়ে ২ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ঘাসের চাষ শুরু করি। সেবছর ২ লাখ টাকার ঘাস বিক্রি করেছিলাম। এবছর প্রতি বিঘা ১৭ হাজার টাকা করে ৭ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে নেপিয়া ঘাস চাষ করেছি। ফ্রিজিয়ান জাতের ৫ টি গরু পালনের পাশাপাশি নেপিয়া ঘাস চাষ করছি।
তিনি আরো বলেন, অল্প থেকে শুরু করে নেপিয়ার ঘাস চাষকে বাণিজ্যিকভাবে চাষে পরিণত করেছি। বিগত ৫ বছর যাবত গরু পালন ও ঘাস চাষ করে আসছি। আমার গরুকেও এই ঘাস খাওয়াই। এক সঙ্গে গরু পালন আর ঘাস চাষের মধ্যে খামারিদের ব্যাপক সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।
মহিপুরের জামতলা গ্রামের চাষী মো. হেলাল হোসেন বলেন, আমি প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে নেপিয়ার ঘাস অনেক লাভজনক। বিঘাপ্রতি ঘাস চাষে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ঘাস বিক্রি করতে পারি।
গাড়িদহ এলাকার চাষি আব্দুল হামিদ বলেন, বিগত ১৮ বছর যাবত ৪ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করছি। আগের থেকে এখন এই ঘাসের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। পতিত জমিতে অন্য কোনো চাষাবাদ করা যায় না বলে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ঘাসের চাষ করবো।
ঘাস ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, শেরপুরের মহিপুর বাজারে কৃষকের কাছ থেকে ঘাস কিনে সেই ঘাস খামারিদের কাছে বিক্রি করি। এই ঘাস বিভিন্ন আকারের আটি বেঁধে বিক্রয় করা হয়। ব্যবসায়ীরা ১০-৪০ টাকা দামের আটি বিক্রি করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া এই তথ্য মতে, শেরপুর উপজেলায় প্রায় ২ হাজার জন খামারি রয়েছে। প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি গরু রয়েছে। জেলাজুড়ে ঘাস চাষের চাহিদা বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে জেলায় ৫৭৫ একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়েছে। এর আগের অর্থ বছরে ৪৪৮ একর জমিতে ঘাস চাষ করা হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১২৭ একর জমিতে ঘাস চাষ বেড়েছে।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান বলেন, গো-খাদ্যের দামের সংকটের কারণে ঘাস চাষের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে বলে মনে করেন তিনি। গরু-মহিষের দুধ, মাংস উৎপাদনের উপকরণ তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে প্রাকৃতিক ঘাস। ফলে গরু বা মহিষকে ঘাস খাওয়ালে তার প্রজনন ক্ষমতাও বাড়ে। এই কারণে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কৃষকদের ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। ঘাসের বীজ, প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে। এর ফল এখন আমরা পাচ্ছি।