নিজের কথা নিজেই রাখলেন না পুতিন

আন্তর্জাতিক

নিউজ ডেষ্ক- ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ভোরে এ হামলা শুরু হয়। সোমবার হামলার পঞ্চম দিন। মূলত রাশিয়ার একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্তে এই যুদ্ধ হচ্ছে।

সাবেক কেজিবি প্রধান কখন কী করতে যাচ্ছেন, তা অনুমান করা খুব কঠিন। এমন মতোই দিয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক স্টিভ রজেনবার্গ। তিনি বিবিসিকে বলেন, পুতিন একজন অননুমেয় ব্যক্তিত্ব।

প্রতিবেদনে তার মজার উদাহরণ দিয়েছেন স্টিভ রজেনবার্গ। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানিয়েছেন, পুতিনকে নিয়ে তিনি কী ভাবেন, আর কী ঘটে।

তিনি বলেন, পুতিন কখনও ক্রিমিয়া দখল করবেন না, নিশ্চিত। পুতিন তা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, দনবাসে পুতিন কখনও যুদ্ধ শুরু করবেন না। তিনি তা করেছেন। ইউক্রেনে পুতিন হামলা চালাবেন না। হামলা চালিয়েছেন।

স্টিভ রজেনবার্গ বলেন, যখনই ভেবেছেন, পুতিন কখনই এমন কাজ করবেন না, তখনই ঠিক সেটিই ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছেন রজেনবার্গ। পুতিনের কখনই এমন কাজ করবেন না, এ ভাবনাই বাদ দিয়েছেন তিনি।

তার পরও স্টিভের মাথায় এখন যে ভাবনা ঘুরছে, তা হলো, পুতিন কখনই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন না। করবেন কি?

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, সেখান থেকে এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা বাহিনীকে ‘বিশেষ’ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলেছেন। পুতিনের অভিযোগ, ইউক্রেন ইস্যুতে ন্যাটো নেতারা আক্রমণাত্মক বিবৃতি দিচ্ছেন।

রাশিয়ার নোভায়া গেজেতা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দমিত্রি মুরাতভ বলেন, পুতিন সেদিন যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি বলা যায়।

দমিত্রি মুরাতভ বলেন, টিভিতে দেওয়া ওই ঘোষণায় পুতিন যেভাবে কথা বলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, তিনি শুধু ক্রেমলিনের নয়, পুরো বিশ্বের অধিকর্তা। চালক যেভাবে গাড়ি চালানো শুরুর আগে হাতের আঙুলে চাবি ঘোরান, পুতিনও যেন সেভাবেই তার হাতের আঙুলে পারমাণবিক অস্ত্র ঘোরাচ্ছেন। পুতিন অনেকবার বলেছেন, রাশিয়া না থাকলে পৃথিবীর কী প্রয়োজন? কেউই হয়তো পুতিনের কথায় সেই সময় ভালোভাবে কর্ণপাত করেননি। তবে এটা ছিল পুতিনের এক ধরনের হুমকি। আর তা হলো যদি রাশিয়া যা চায়, তা না হয়, তাহলে সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

২০১৮ সালের এক তথ্যচিত্রে পুতিন বলেন, ‘যদি কেউ রাশিয়াকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের জবাব দেওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে। আর এমনটা হলে বিশ্ব ও মানবতার জন্য বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু আমি রাশিয়ার একজন নাগরিক। রাষ্ট্রপ্রধান। রাশিয়া ছাড়া কোনো বিশ্বের আমাদের কী প্রয়োজন?’

এত সব নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে কি বিপদে ফেলবে? মস্কোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহায়ার বলেন, পুতিন কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করলে ও রাশিয়ায় বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমন পরিস্থিতিতে পুতিনের হাতে খুব বেশি বিকল্প থাকবে না।

মস্কোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহায়ার বলছেন, এসব নিষেধাজ্ঞা আটকানোর কিছু উপায় রয়েছে পুতিনের। তিনি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে ইউরোপ বিপদে পড়বে। আরেকটি উপায় হলো, তিনি ব্রিটেন ও ডেনমার্কের মধ্যবর্তী নর্থ সিতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ করতে পারেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *