নিউজ ডেষ্ক- শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় এক কলেজ শিক্ষিকাকে চড়-থাপ্পড় ও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার আলহাজ্ব সফুরা বেগম মহিলা কলেজের পরীক্ষার হলে এ ঘটনা ঘটে।
সরকারি সামছুর রহমান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহবুব তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ এবং পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ আতিকুল ইসলাম রাতুলসহ ছাত্রলীগের ৭/৮জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার। থানা-পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আলহাজ্ব সফুরা বেগম মহিলা কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি ও বাংলা পরীক্ষা চলছিল। এ পরীক্ষার কেন্দ্রে পার্শ্ববর্তী সরকারি সামছুর রহমান কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। বেলা ১টায় পরীক্ষা শুরু হয়। আধা ঘণ্টা পর নিজ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নকলে সহযোগিতা ও অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য সহকারি সামসুর রহমান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহবুব তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ এবং পৌরসভার ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম রাতুলসহ সাত-আটজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পরীক্ষার হলে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শারমিন রহমান তাঁদের বাধা দেন। তাঁরা তখন ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়। তাতেও ওই শিক্ষিকা তাঁদের ঢুকতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শারমিন রহমানকে চড়-থাপ্পড় ও ধাক্কা দেয়।
পরে বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন শাহকে জানান ওই শিক্ষিকাসহ পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকেরা।
এর আগেও পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বনে বাধা দেওয়ায় অন্য শিক্ষকদের হুমকি ধমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষিকেরা। তাঁরা অধ্যক্ষকে জানালেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। পরীক্ষার কেন্দ্রে পুলিশ দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও দেখা তাদের মেলেনি।
অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী শারমিন রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে ছাত্রলীগের মাহবুব তালুকদার, মাসুম বিল্লাহ এবং আতিকুর রহমান রাতুলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতা-কর্মীরা পরীক্ষার হলে ঢোকার চেষ্টা করে। আমি ঢুকতে বাধা দেওয়ায় মাহবুব তালুকদার আমাকে চড়-থাপ্পড় ও ধাক্কা মারে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফোননম্বরে একাধিকবার করা হলে নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন শাহ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পরে বিকাল ৪টার দিকে বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
গোসাইরহাট থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আলহাজ্ব শামসুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি, আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটির সভাপতি দেওয়ান আজমল হোসেন নয়ন বলেন, ‘কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় সংগঠন নিবে না। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দোষীদের বহিষ্কার করবো।’
কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
তবে সন্ধ্যার পরে ইউএনও মো. আলমগীর হুসাইন জানান, বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অভিযুক্ত মাহবুব তালুকদারকে আটক করেছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষায় বাধাদানের দায়ে মাহবুব তালুকদারকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।