নিউজ ডেষ্ক- নওগাঁর সাপাহারের আম যাচ্ছে ইংল্যান্ডে। উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রোপার্ক’ এর মালিক সোহেল রানা তার বাগান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আমগুলো রপ্তানি করছেন।
সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় প্রথম চালান হিসেব এক টন (প্রায় এক হাজার কেজি) আম পিকআপে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় এ চালান উড়োজাহাজে ইউরোপের দেশ ইংল্যান্ডে যাবে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে চাষ করা এ আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নর্থবেঙ্গল অ্যাগ্রো লিমিটেডের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন। সে হিসাবে প্রায় তিন লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার বিশ্বের আটটি দেশে নওগাঁর আম রপ্তানি হবে।
দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান।
উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার ৮০ আম চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব চাষির বাগানে ৯০ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনায় চাষ হওয়া অন্তত ১০০ মেট্রিক টন আম চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিল।
জেলার বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট এবং পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা। এসব এলাকা আম্রপালি আমের জন্য বিখ্যাত। আমগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট।
বরেন্দ্র অ্যাগ্রোপার্কের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ইংল্যান্ডে রপ্তানির জন্য এক মেট্রিক টন আম নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কোয়ারেন্টাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মান নিশ্চিত করা হবে। এরপর ছোট ছোট কাগজের কার্টনে দুই কেজি করে প্যাকেজিং করা হবে। প্রতি কেজি আম ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। রপ্তানিকারকরা দেশের বাইরে পরিবহন, প্যাকেজিং ও আনুষঙ্গিক সব খরচসহ প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন।
তিনি আরও বলেন, বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষে কৃষি অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। গত বছর থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ করা হচ্ছে। এ বছর ১০০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা দুটি বাগানে আম চাষ করা করেছি। বাগানে রপ্তানি উপযোগী মিয়াজাকি, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগো, রেড পালমার, টেনসিংটন প্রাইড, অস্টিন, বারি-৪, গৌরমতি, কাটিমন জাতের আম চাষ হয়েছে। গত বছর আট মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা করছি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, এ মৌসুমে বাইরের আটটি দেশে আম রপ্তানি করা হবে। নিরাপদ আম রপ্তানির লক্ষ্যে জেলার ৮০ জন চাষিকে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরমধ্যে বেশকিছু চাষির সঙ্গে রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর চুক্তি হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আম চাষ করছেন। তাদের মধ্যে সোহেল রানা নামে এক চাষি তার বাগান থেকে আম্রপালি আম পাঠাচ্ছেন। এটি চলতি বছর নওগাঁ থেকে বিদেশে আম রপ্তানির প্রথম চালান।