দেশের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে সাত উদ্যোগ

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক– যুদ্ধের ডামাডোলে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বিশ্ববাজারের পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুত গড়ে তুলছে। পাশাপাশি সরবরাহ চেইনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চাল-ডাল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ানো হচ্ছে। এরইমধ্যে ঘনিয়ে আসছে রোজা। এ সময় আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পণ্যের আমদানি বাড়ানোসহ সাতটি উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া উদ্যোগগুলো হচ্ছে-সমুদ্র, স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পণ্য খালাস করা। ফেরি পারাপারে পণ্য পরিবহণের অগ্রাধিকার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায়তা। এছাড়া টিসিবির কার্যক্রমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও মজুদদারির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি এবং খাদ্য আমদানি বৃদ্ধি।

এদিকে ভোজ্যতেল আমদানি, রিফাইনারি ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। গত তিন মাসে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি, কোথায় বাজারজাত এবং কোন মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা রিফাইনারি ও আমদানিকারকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। যদি দেখা যায় তারা সরবরাহ চেইনে সমস্যা সৃষ্টি করেছে, বাজারে প্রতিযোগী পরিবেশ নষ্ট করেছে সেক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত হয়ে কেউ অভিযোগ করলেও তা আমলে নেওয়া হবে।

বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিআইডিএসের সাবেক ডিজি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি বলেন, দুটি কারণে বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমত ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এবং দ্বিতীয়ত আসন্ন রোজার মাস। ঐতিহাসিকভাবে রোজা এলেই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। যেভাবেই হোক সেটি বাড়ে। আর সম্প্রতি যুদ্ধ বিশ্ববাজারে মূল্য খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে আঘাত আসছে। আমরা যুদ্ধরত দেশগুলো থেকে গম, ভোজ্যতেল, ভুট্টা আমদানি করছি। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারের কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যতটুকু বৃদ্ধির কথা কতিপয় ব্যবসায়ী তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করে থাকেন। এ জন্য সরকারকে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা উদ্যোগ নিতে হবে।

সূত্র মতে, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশন দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে আসন্ন রমজানকেন্দ্রিক পণ্যগুলো খালাসে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ফেরি পারাপারে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিআইডব্লিউটিসিকে। কারণ ফেরি পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহণকে অপেক্ষা করতে হয়। পণ্য পরিবহণ যাতে সে ধরনের সমস্যায় না পড়ে তাই এ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে সহায়তা দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পণ্য পরিবহণ নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সব ডিসিকে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামী রমজান সামনে রেখে টিসিবি এক কোটি পরিবারের মাঝে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথম দফায় ৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ এবং দ্বিতীয় দফায় ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে টিসিবির এই কর্মসূচি চলবে। টিসিবির কার্যক্রমকে সার্বিক সহায়তার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৫শ থেকে ১ হাজার কেজি চিনি, একই পরিমাণ মসুর ডাল, এক হাজার লিটার ভোজ্যতেল ও এক হাজার কেজি পেঁয়াজ ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে খুচরা ও পাইকারি বাজারে অনেক ব্যবসায়ী বেশি দাম আদায় করছে। কোথায়ও আবার পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ভোক্তারা যাতে ন্যয্যমূল্যে পণ্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও পাইকারি বাজারে পণ্য সরবারহ চেইনে যাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশের পর শীর্ষ রিফাইনারি ও মধ্যস্বত্ব ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চাল ও গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানির চুক্তি পত্র অনুযায়ী আড়াই লাখ মেট্রিক টনের বেশি আমদানি হয়ে গেছে। ফলে এই দুই দেশের যুদ্ধ সরকারি গম আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা তৈরি করতে পারবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *