লেখক ও চিন্তক আকবর আলি খান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনীতি, আমলাতন্ত্র, সাম্প্রতিক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি, সুশাসন, অর্থনীতিসহ আরও নানা বিষয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শওকত হোসেন।
বরিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলো। তারপর আরও ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে আপনি কী কী লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন?
আকবর আলি খান: বরিশালে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে, আবার প্রশাসনিক অবক্ষয়ও দেখা যাচ্ছে। কারণ, একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক নেতাদের কাজ নীতিনির্ধারণ, আর সেই নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করার কথা আমলাতন্ত্রের। সুতরাং আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদের একে অপরের পরিপূরক হওয়ার কথা। অথচ দেখা গেল, তারা সাংঘর্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটা দুঃখজনক। আমলাতন্ত্রের এ রকম স্বতন্ত্র ভূমিকা নেওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার আমলাতন্ত্রের যে সমিতি বা অ্যাসোসিয়েশন থাকে, সেগুলো থাকে মূলত তাদের চাকরিবাকরির সুবিধার জন্য। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের নেই এবং সেটি তারা করতে চায় বলেও মনে হয় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বরিশালের ঘটনার পর তেমনটাই চাওয়া হলো।
এ রকম অভিজ্ঞতা কিন্তু ভারতেরও রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার) কর্মকর্তাদের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা দেখা দিয়েছিল। তবে উত্তর প্রদেশে আইএএস কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের যে রকম সমালোচনা করেছেন, নিজেদের নিয়েও সমালোচনা করেছেন তাঁরা। নব্বইয়ের দশকে উত্তর প্রদেশে অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোট দিয়ে প্রতিবছর দু-তিনজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হতো, তাঁদের নামও প্রকাশ করা হতো। এ ধরনের ব্যবস্থা যদি নেওয়া যায়, তাহলে আমলাতন্ত্রের পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার কিছুটা নৈতিক ভিত্তি থাকে। কিন্তু বরিশালে যা ঘটেছে, এর পেছনে কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। আবার আমলাতন্ত্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করেন, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং রাজনৈতিক দল তাঁর নির্দেশেই কাজ করে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে কোনো লাভ নেই। সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনাররা অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের কোনো শক্তি নেই। সুতরাং আমার মনে হয় যে এটা তাড়াতাড়ি মিটে যাবে। তবে মিটে গেলেই চলবে না। ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে দিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
ওই সংঘর্ষের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তকে মোকাবিলা করা’সহ যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলো। এটি কি নিছক তাৎক্ষণিক, নাকি পুঞ্জীভূত লাভার বিস্ফোরণ?
আকবর আলী খান: যে কারণেই ঘটুক, এটা অস্বাভাবিক। দেখেন, ভারতে কিন্তু আইএস অফিসাররা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে দোষ দিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তাঁদের নিজেদের দুর্বৃত্তদেরও চিহ্নিত করেছেন। আমাদের এখানে কিন্তু শুধু রাজনীতিবিদকে দোষ দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁদের মধ্যেও যে দুর্বৃত্ত থাকতে পারে, সেই বক্তব্য আসেনি। সুতরাং এটা একেবারেই পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য।
এমন অভিযোগ উঠছে যে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনীতিকরণ অনেক বেড়ে গেছে এবং প্রকাশ্যে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতিটা আপনি কীভাবে দেখছেন?
আকবর আলি খান: রাজনীতিকরণ অবশ্যই অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তাকে আমি আমার বইয়ে ‘গ্রেশামস ল ব্যাধি বা অসুখ’ বলে চিহ্নিত করেছি। অর্থাৎ এখানে দুষ্ট লোকেরা পুরস্কার পায় আর শিষ্ট লোকদের দমন করা হয়। এখন যা হয় তা হলো, রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করলে পদোন্নতি পাওয়া যায়, আর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্ট করলে পদোন্নতিবঞ্চিত হতে হয়। আমাদের দেশে নিঃসন্দেহে প্রশাসনে প্রচণ্ড রকম রাজনীতিকরণ ঘটেছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বের হতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে?
আকবর আলি খান: এসব বিষয়ে যেসব আইন, কানুন ও বিধি আছে, তা খুব সুস্পষ্ট। এগুলো যদি মেনে চলা হয়, সবাই যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে, তাহলে তো এগুলো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেছে। আর এটা হলে এর কোনো সহজ ওষুধ নেই।
এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের দায় কতখানি?
আকবর আলি খান: রাজনীতিবিদদের দায় তো অবশ্যই আছে, সঙ্গে সঙ্গে আমলাতন্ত্রেরও দায় আছে। রাজনীতিবিদেরা যেহেতু দেশের প্রশাসন পরিচালনা করছেন, সুতরাং এ ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
* রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের নেই। * আমাদের দেশে নিঃসন্দেহে প্রশাসনে প্রচণ্ড রকম রাজনীতিকরণ ঘটেছে। * দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যদি বেতন বাড়ান, তাহলে বর্ধিত বেতনও নেবেন, আবার দুর্নীতিও করবেন। * সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রভাব অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ত্রাণ কার্যক্রম ও করোনা মোকাবিলাসংক্রান্ত কাজে প্রতিটি জেলায় একজন করে সচিবকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
আকবর আলি খান: সব ব্যাপারেই রাজনৈতিক নেতারা নেতৃত্ব দেবেন, আর সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, এটা ঠিক নয়। যেখানে সচিবের অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ সহজ হবে, সেখানে দায়িত্ব সচিবকে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দায়িত্ব পেলেই সচিবরা যাতে মনে না করেন যে তাঁরা রাজনৈতিক নেতাদের ঊর্ধ্বে। বরং তাঁদের সহযোগিতায়, তাঁদের অধীন থেকে সচিবদের কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। যদি রাজনৈতিক নেতার হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হয়, তাহলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কম থাকে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে, তাহলে শুধু কাজটি শেষ করলেই হয় না, তাকে রাজনৈতিক নেতাদেরও সন্তুষ্ট রাখতে হয়।
সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এখন অনেক বেড়েছে। এরপরও দুর্নীতি কমছে না। উপায় কী তাহলে?
আকবর আলি খান: আমি মনে করি না সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ালেই দুর্নীতি কমে যাবে। কেননা ইতিমধ্যে সরকারে যথেষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যদি বেতন বাড়ান, তাহলে বর্ধিত বেতনও নেবেন, আবার দুর্নীতিও করবেন। এতে বেতন ও দুর্নীতি দুটোই বাড়বে। সুতরাং এভাবে দুর্নীতির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধান করতে হলে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ধরে তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। তাঁদের চাকরি থেকে বের করে দিতে হবে। কিন্তু তাঁরা যদি চাকরিতে থাকেন, আর বেতন বাড়াতে হয়, তাহলে বেতন বাড়িয়ে এই দুর্নীতির সমস্যার সমাধান হবে না।
অনেকেই বলে থাকেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় তার প্রভাবে রাজনীতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও পুলিশে তার মন্দ প্রভাব পড়েছে। আপনি পরিস্থিতিটাকে কীভাবে দেখছেন?
আকবর আলি খান: আসলে সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দুভাবেই এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, আর প্রশাসন সরকারের কাছ থেকে অযৌক্তিক সুবিধাগুলো আদায় করার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় দুই পক্ষই পরস্পরের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। সুতরাং দেশে গণতান্ত্রিক শাসন সুদৃঢ়ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া সুশাসনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
আপনি কি এর কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন?
আকবর আলি খান: আমি লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। পাচ্ছি না এ জন্য যে আন্তর্জাতিকভাবে সুশাসনের পরিমাপ যেভাবে করা হয়, তাতে ১০ বছর ধরে ক্রমাবনতি দেখতে পাচ্ছি। কোথাও উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে ক্রমেই সুশাসন ক্ষয় হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের যে প্রশাসন, তা পৃথিবীর ৮০ ভাগ দেশের প্রশাসনের চেয়ে দুর্বল। এটা মোটেও কাম্য নয়। এ পরিস্থিতিতে দেশে সুশাসনও নিশ্চিত করা যাবে না।
কিন্তু সুশাসনের সঙ্গে তো অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। তাহলে আমরা সামনে কী করে এগোব?
আকবর আলি খান: অর্থনীতির ক্ষেত্রেও আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, যে অতিমারি হয়েছে, এতে আমাদের অর্থনীতি বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে শুনতে পাচ্ছি, আমাদের দেশে নাকি দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে। আমাদের অভিঘাত নাকি ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মতো। অর্থাৎ বাঁ দিকের রেখা নিচের দিক নেমে আবার ডানে দ্রুত উঠে যাবে। সুতরাং এতে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু আসলেই এটি ভি অক্ষরের মতো অভিঘাত কি না, আমার সন্দেহ আছে। আমার মনে হয় এটা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী হবে।
আমাদের বর্তমান যে অর্থনীতি তার ৫০ শতাংশের বেশি আসে সেবা খাত থেকে। এই সেবা খাতে অতিমারির প্রভাব খুব খারাপভাবে পড়েছে। সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা, বিমান চলাচল, নৌপথের লঞ্চ ও স্টিমার, সড়কপথ—সব কটিতেই প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বন্ধ ছিল রেস্তোরাঁ, পর্যটন। সব মিলিয়ে সমগ্র সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে হয় না। যখন দাবি করা হয় এখানে প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে, তখন ভারতের রাহুল গান্ধীর একটি উক্তি মনে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন যে ভারতে জিডিপি সাংঘাতিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। রাহুল গান্ধী বললেন, জিডিপি বলতে কী বোঝাচ্ছেন? জিডিপি মানে কি গ্যাস, ডিজেল আর পেট্রোলিয়াম? এই তিনটার দাম তো অবশ্যই বেড়েছে। কিন্তু জিডিপির মানে যদি হয় ‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’, তাহলে তা আদৌ বাড়েনি। সুতরাং আমাদের এখানেও জিডিপি বেড়ে যাওয়ার দাবি তোলার আগে জিডিপির সংজ্ঞা সব সময় মনে রাখতে হবে।
তাহলে সামনে আমাদের করণীয় কী?
আকবর আলি খান: সামনের দিনগুলোতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। উল্লসিত হয়ে কাজ করলে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করতে হবে এবং দরিদ্রদের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। কারণ, এই পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে দারিদ্র্য নিরসনের জন্য আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
আপনি দারিদ্র্যের কথা বললেন। আপনি নিজে এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি দারিদ্র্যের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন?
আকবর আলি খান: প্রথমত, আমাদের দারিদ্র্যের যে সংজ্ঞা সেটি ১৯৭১ সালের পরিস্থিতিতে করা। তখন আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ ছিল, আমরা অত্যন্ত নিচের পর্যায়ে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছিলাম। এখন পৃথিবীর সব দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এখন দারিদ্র্যের যে সংজ্ঞা, সেটা অনেক উঁচু হবে। আর সেই উঁচু দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দিয়ে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব যে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি। আবার অতিমারিতে দারিদ্র্যের ওপর খুবই খারাপ প্রভাব পড়েছে। বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, আগে মাথাপিছু আয় বাড়লে যে হারে দারিদ্র্য কমত, এখন সেই হারে কমছে না। সুতরাং এখন দারিদ্র্য কমাতে হলে অনেক বেশি হারে মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের উন্নত অঞ্চল ও অনুন্নত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ব্যবধান বেড়ে চলছে। অর্থনৈতিক অসাম্য বাড়ছে। তৃতীয়ত, আমাদের শহরাঞ্চলে অতিদরিদ্রের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। এ পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য নিয়ে আমাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন এবং তা কমাতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।