বর্তমান সরকার ভুল পথে চলছে বলে মনে করেছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে দরিদ্র অনাহারী মানুষদের খাদ্য ও কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশ শেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভুখা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২৮ তারিখ হরতালের সমর্থনে এই ভুখা মিছিল প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্ট মোড়, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর হয়ে হোটেল ৭১-এর বিপরীতে রাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সব কাজই দরিদ্র মানুষের বিরদ্ধে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সার্বিক কী অবস্থা বিরাজ করছে তা জনগণ দেখছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান সরকারের কী অবস্থা হবে তা আপনাদের জানা আছে। ‘তিনি বলেন, ‘আমাকে সবাই অনুরোধ করে আমি যেন বিএনপিকে নিয়ে কিছু না বলি। কিন্তু মাঝে মাঝে না বলে পারি না।
বিএনপি বহু জায়গায় না বলছে। তারা বলেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এটাকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি। আজকে আরেকটা বিষয়ে বিএনপিকে না বলতে শিখতে হবে। এই যে, খালেদা জিয়াকে বারবার জামিন না দিয়ে বা জামিনের নামে বারবার অপমান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে যে প্রক্রিয়ায় বাহিরে রাখা হয়েছে সেটি অপমানজনক।
খালেদা জিয়াকে আবার সেই নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারেই ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। উনি বাহিরে থেকে কী লাভ হচ্ছে? উনি তো আমাদের সঙ্গে এসে মিটিং করতে পারছেন না। জনগণের হয়ে কথা বলতে পারেন না। আপনাদের (বিএনপি) কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসুন। তার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করুন। এতে সবারই লাভ হবে। ‘
জেএসডির সভাপতি আ স ম রব বলেন, ‘আজ ঘরে ঘরে দুর্ভিক্ষ চলছে। এই সরকার গরিব-দুঃখীদের দেখে না। যখন দুর্ভিক্ষ্যের মতো অবস্থা তখন তারা আতশবাজি করে, বেলুন ফুটায়। আপনাদেরকে বলি, ক্ষমতা ছেড়ে আপনাদের তো যেতে হবেই। গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ন্যায্য মূল্যে ভাত দেন, রুটি দেন, নইলে গদি ছেড়ে দেন। ‘নগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সরকার সাধারণ জনগণকে কোনো তোয়াক্কা করে না। অন্যদিকে এক মন্ত্রী বলেন, ‘দাম বাড়লে কী হয়েছে? সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতা তিন গুণ বেড়েছে। ‘ তাই সাধারণ মানুষের উচিত এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে হরতাল করা।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মাদ ইবরাহিম বলেন, ‘দেশের বর্তমান যে অবস্থা এতে করে আমাদের সবাই মিলে দেশকে বাঁচাতে হবে, এই সরকারকে হটাতে হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু বলতে হচ্ছে এমন দেশের জন্য আমি যুদ্ধ করিনি। ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আগামী ২৮ মার্চ সোমবার দেশের জনগণের বেঁচে থাকা ও দুই কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়ার দাবিতে আধাবেলা হরতাল ডাকা হয়েছে। সে হরতালে আমরা রাজপথে থাকব। দিনমজুর, অসহায় মানুষ, রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যানচালকসহ সকল স্তরের জনগণকে এ হরতাল সফল করার আহ্বান জানাই। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার জনগণকে অন্ধকারে রেখে, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে বিদেশে বেগমপাড়া তৈরি করছে আর জনগণের ওপর একের পর এক জুলুম করে যাচ্ছে। কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না। ২৮ মার্চ যে হরতাল ডাকা হয়েছে তার পর আরো হরতাল আসবে সৈরাচারী সরকারের পতন করেই আমরা ঘরে ফিরে যাব। ‘ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পাঁচ টাকার জিনিস ৫০ টাকা হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে এর মাধ্যমে সরাসরি জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যে যত বাড়ে ভ্যাট-ট্যাক্স তত বাড়ে, সরকারের কোষাগারে টাকা জমা হয়। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করতে সুবিধা হয় সরকারের লোকদের, নিজেদের পকেট ভরতে পারে তারা। এসব অন্যায়-অবিচার বর্তমান সরকার চালাতে পারছে, কারণ জনগণকে তারা তোয়াক্কা করে না। ‘
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, গণ-অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, আক্তার হোসেন, ডিসেম্বর এল এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হান্নান আহমেদ খান বাবলু, অটোরিকশা শ্রমিক নেতা মোজাম্মেল হক প্রমুখ।