জীবনের তাগিদে প্রায়ই আমাদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয়। দূরপাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে সবাই বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। তবে তুলনামূলক আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য অনেকে ট্রেনকে বেশি বেছে নেন। তা ছাড়া চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়াও সাশ্রয়ী। আমাদের দেশে অনেকে খেলার ছলে বা অসৎ উদ্দেশ্যে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে থাকে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে, যা দুঃখজনক। এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঢাকাগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা পাথর নিক্ষেপ করে। এ সময় পাথরের আঘাতে ইঞ্জিন কামরার জানালার কাচ ভেঙে সহকারী ট্রেনচালকের দুই চোখে বিদ্ধ হয়। তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তাঁর এক চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। প্রত্যেক মসজিদে জুমার বয়ানে ইমাম সাহেবকে এ বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করতে পারে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা জোরদার করা, রেলের জনবল বাড়ানোসহ ইত্যাদি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রতিটি ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলওয়ে পুলিশকে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অপরাধী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন (১৮৯০)–এর ১২৭ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। আর কোনো রেলযাত্রী মারা গেলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান ও পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে সে ক্ষেত্রে তার অভিভাবককে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সমাজের পাশাপাশি পরিবারেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর কুফল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। পাথর নিক্ষেপে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও বহুবিধ ক্ষতি সাধন হয়। তাই আসুন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কল্যাণে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থেকে নিজে বিরত থাকি, অন্যকেও বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করি।
ফজলে রাব্বি
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা।