নিউজ ডেষ্ক- পয়োঃবর্জ্য দিয়ে নদী দূষণের দায়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাতে চান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ওয়াসার এমডি, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করব আমরা, চাইব যেন তাদের ছয় মাসের জেল, চার লাখ টাকা জরিমানা হয়। রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় ঢাকার চারপাশের নদ–নদীদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একথা বলেন। বিশ্ব নদীদিবস উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এ সভার আয়োজন করে।
মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরের মানুষ ৫০ লাখ কেজি মল ও ১৫০ কোটি লিটার মূত্র উৎপাদন করে। ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এগুলো শোধন করা, কিন্তু এগুলো সিটি করপোরেশনের পানি নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে নদ–নদীতে গিয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে তাদের অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। অনেকবার মিটিং করা হয়েছে। কিন্তু মিটিংয়ে ওয়াসা ও উত্তর সিটি একজন করে জুনিয়র অফিসার পাঠায়। তারা গিয়ে হয়তো মিটিংয়ের সিদ্ধান্তর কথা বলতেও পারে না।
তিনি বলেন, পয়োঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার এই ব্যর্থতার কারণে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওয়াসা তো পুরান পাপি, ওয়াসার পয়োঃবর্জ্য নগরী বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নগরের এসব বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল পরিদর্শনের উদাহরণ টেনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে সে জন্য খালের মুখে নেট বা বাঁশ বেঁধে দিতে বলা হয়েছিল। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো সে কাজ করেনি। এ জন্য করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের এ ধরনের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদীতে বর্জ্য ফেলার জন্য তো কেউ না কেউ দায়ি হবেন। তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। নদী কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নদী দূষণের জন্য দূষিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর আমি তাই করছি। এটাই নিয়ম, হয়তো তারা জামিন পেয়ে যাবেন। সমস্যা নেই।
কিন্তু অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। বলেন, তাপস সাহেব খালের মাথায় সেগুলো করার চেষ্টা করছেন।
কারণ হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, খালের দূষিত পানি যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে সে জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র খালের মুখে বর্জ্য শোধনাগার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছে এটাই তো বড় একটা ধাপ।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এর আগেও পটুয়াখালীর মেয়রকে নদীর পাড়ে মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন করেছি। তার অর্ডারে পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ফেলা হতো। এর জন্য তাকেও ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছিল।
ওয়াসার এমডি ও উত্তরের মেয়রকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দেয়ার আগে তাদের কোনো নোটিশ করা হবে কিনা জানতে চাইলে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এই অপরাধের শাস্তি এটাই। এর জন্য আগে থেকেই তাদের কোনো নোটিশ করার প্রয়োজন নেই। মোবাইল কোর্ট চালাতে আগে নোটিশ করার প্রয়োজন হয় না। তারা এবার কোথায় বের হলে মোবাইল কোর্ট নিয়ে গিয়ে শাস্তি দেয়া হবে।