নিউজ ডেষ্ক- অন্যান্য জাতের কলার মতো আটিয়া কলা গাছের রাইজম বা গোড়া থেকে উৎপন্ন অসি চারা বা সাকার বা তেউরের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। অসি তেউর (sword sculler) মূল কন্দ থেকে বের হয়। গোড়া থেকে উপরের দিকে সরু দেখতে অনেকটা তলোয়ারের মতো। অসি তেউড়ের পাতা সরু সুচালো গুড়ি বড় এবং চারা শক্তিশালী। আটিয়া কলা বীজ বা সাকার দ্বারা বংশবিস্তার করা যায়। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য এখনও বীজ গবেষণায় ব্যবহৃত
রোপণ : আটিয়া কলা বছরের যে কোনো সময়েই আটিয়া কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে কলা রোপণের উত্তম সময়, আশ্বিন-কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য নভেম্বর), মাঘ-ফাল্গুন (মধ্য জানুয়ারি-মধ্য মার্চ) এবং চৈত্র-বৈশাখ (মধ্য মার্চ- মধ্য মে)। আটিয়া কলা অতিমাত্রায় বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বিশেষ কোনো যত্ন ছাড়াই আটিয়া কলা ভালোভাবে জন্মানো যায়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে বা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করতে হলে, জমি ভালোভাবে চাষ করে ২.০ মিটার দূরে ও ৬০x৬০x৬০ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে। প্রতি গর্তে সম্পূর্ণ গোবর/আবর্জনা পচাসার, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট এবং বরিক এসিড সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিয়ে ১৫-২০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে ।
সার প্রয়োগ : আটিয়া কলার গাছপ্রতি আর হেক্টরপ্রতি সার লাগবে ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ও ১২৫০ কেজি, টিএসপি ৪ গ্রাম ও ১ হাজার কেজি, এমওপি ৬ গ্রাম ও ১৫ কেজি, জিপসাম ২ গ্রাম ও ৫ কেজি, দস্তা ৪. গ্রাম ও ১১ কেজি এবং বরিক এসিড ২ গ্রাম ও ৫ কেজি। পরিমাণ মতো গোবরের সাথে সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট এবং বরিক এসিড সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পরপর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চারদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
পানি সেচ ও নিকাশ : শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে। বর্ষার সময় বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে, তার জন্য নালা করে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাকার বা চারা ছাঁটাই : আটিয়া কলার চারা রোপণের পর থেকে কলার কাদি বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গাছের গোড়ায় কোনো চারা রাখা উচিত নয়। কাদি সম্পূর্ণ বের হওয়ার পর গাছপ্রতি একটি করে চারা রেখে বাকি চারাগুলো কাঁচি বা হাঁসুয়া দিয়ে মাটির সমতলে কেটে ফেলতে হবে। সময়মতো আগাছা দমন, অপ্রয়োজনীয় পাতা পরিষ্কার, খুঁটি ও গোড়ায় মাটি দেয়া, মোচা অপসারণ, কাঁদি ঢেকে দেয়া ইত্যাদি পরিচর্যা করতে হবে।
কলা সংগ্রহ ও ফলন : রোপণের ১৮-২০ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের আটিয়া কলা পরিপক্ব হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে। সাধারণত মোচা আসার পর ফল পুষ্ট হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। আটিয়া কলা কাটার পর কাঁদি শক্ত জায়গায় বা মাটিতে রাখলে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে এবং কলা পাকার সময় দাগওয়ালা অংশ তাড়াতাড়ি পচে যায়। উপযুক্ত পরিচর্যা করলে প্রতি কাঁদি কলার ওজন ১৭-২০ কেজি ও ১৪০-১৬০টি কলা এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।