নিউজ ডেস্ক: বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো ফল করায় খুশি হয়েছেন পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে লামিয়া আক্তারের।
আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় একমাত্র অভিভাবক বাবা ও মা তাদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ।
জিপিএ-৫ পেয়েও পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে লামিয়া আক্তারের। উপজেলার রাংতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে এসএসসিতে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মেধাবী ছাত্রী লামিয়ার বাবা কামাল সিকদার তিনি পেশায় একজন কৃষক। তিনি অন্যের জমিতে কৃষি ফসল ফলান। তা বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালান। অভাবের এ সংসারে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে লামিয়া।
উপজেলার রাংতা গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর ও ছয় সন্তানের বাবা কামাল সিকদারের মেয়ে লামিয়া আক্তার। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লামিয়া চতুর্থ। তার বড় ভাই একজন প্রতিবন্ধী। বড় বোন আসমা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় বোন আছিয়া আক্তার এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তৃতীয় বোন সামিরা আক্তার সপ্তম শ্রেণিতে ও ছোট ভাই তামিম দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তার মা হাফিজা বেগম গৃহিণী।
লামিয়া আক্তার জানায়, নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে সেই আয়ের টাকায় নিজের ও তার ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছে। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি ও পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় টাকা তার দিনমজুর বাবার পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য লামিয়া এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে এখন দিন পার করছে বলে জানা গেছে।
লামিয়ার বাবা কামাল সিকদার জানান, অভাব-অনাটনের মধ্যেও মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। আটজনের সংসারে কৃষি কাজ করে সেই আয় দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু মেয়ের কলেজে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।
লামিয়ার মা হাফিজা বেগম জানান, তার মেয়েটি খুবই মেধাবী। নিজে প্রাইভেট না পরে অন্যকে প্রাইভেট পরিয়ে নিজেরসহ বোন ও ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে এসেছে। লামিয়া পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়।
লামিয়ার বড় বোন আসমা আক্তার জানান, লামিয়া ভালো ছাত্রী হওয়ার কারণে পড়াশোনার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছে। তাই লামিয়া এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন লামিয়ার ভালো কলেজে ভর্তি করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করা আমাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর টাকা না হলে লামিয়া কলেজে ভর্তি হবে কীভাবে?
রাংতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, লামিয়া আক্তার একজন মেধাবী ছাত্রী। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।