জাপানি দুই শিশু কার কাছে থাকবে জানিয়েছে আদালত

বাংলাদেশ

নিউজ ডেষ্ক– বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর দুই মেয়েকে নিয়ে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়েছে, ওই দুই শিশু মায়ের সঙ্গে থাকবে। একই সঙ্গে পারিবারিক আদালতে করা মামলাটি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফিদা এম কামাল, আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনীক আর হক। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।

এর আগে দুই মেয়েকে কাছে নিতে এরিকো নাকানোর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) ওপর ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ বিষয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন আদালত। তার ধারাবাহিকতায় আজ এ আদেশ দেওয়া হলো।

এর আগে ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দেন। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই শরীফ ইমরানের সঙ্গে বিয়ে হয় এরিকো নাকানোর। জাপানি আইনানুসারে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা টোকিওতে শুরু করেন বসবাস। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।

তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সাত বছরের সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে একই বছরের ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।

কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

এরপর একই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *