জানা গেল অজানা তথ্য, ঘরে বসেই জাবির সাবেক ভিসির আয় দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার টাকা থেকে বড় অঙ্কের সম্মানি নিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা। গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ কমিটির করা এই সুপারিশ পরবর্তীতে সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পট্রোলার অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কর্মকর্তারা এই টাকা পেয়েছেন। একই বিষয় নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের (উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ) শিফট প্রতি তিন হাজার টাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের জন্য শিফট প্রতি ১৫০০ টাকা হারে দেওয়ার আদেশ রয়েছে।

সিন্ডিকেটের অনুমোদনের পর ৪৬ শিফটের জন্য যথাক্রমে সর্বোচ্চ এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ৬৯ হাজার টাকা করে পেয়েছেন ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা। নথিপত্র থেকে আরও জানা যায়, এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা পরিদর্শনকারী শিক্ষক ৫৬১ জন, কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য ১৮, স্কুল/কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক ৫৯ জন ও নিরাপত্তা কমিটির সদস্য ৩৮ জনকে সম্মানি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম পেয়েছেন এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পেয়েছেন আরও এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সাবেক উপাচার্য পেয়েছেন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তবে জানা যায় ভর্তি পরীক্ষার সময় তিনি একদিনও বাসভবন থেকে বের হননি।

এছাড়া, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দুই লাখ ৮১ হাজার টাকা করে পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। তবে সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেনকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য দেখিয়ে এক লাখ ৪৩ হাজার দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্মানি দেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই চলে আসছে। ভর্তি পরীক্ষার বেশিরভাগ সভা আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে হয়েছে। আমাকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে সম্মানি দেওয়া হয়েছে। কে কয়টা মিটিং করেছে এ নিয়ে টাকা ভাগ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া টাকা আমি চাইনি, আমাকে সম্মানি ‍হিসেবে তা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০ ইউনিটে ১৮৮৯ সিটের বিপরীতে মোট আবেদন জমা পড়ে তিন লাখ আট হাজার ৬০৬টি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয়েছে ১৭ কোটি পাঁচ লাখ ১২০০ টাকা। এই অর্থ থেকে সম্মানি বাবদ ৬৭৬ জনকে মোট তিন কোটি ১৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮০ টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার মোসানুল কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, ‘বাসে আছি। কথা বুঝতে পারছি না। পরে কথা বলবো।’ উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এই আয়ের ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা পরীক্ষা আয়োজনে ব্যয় হলেও বাকি ৮ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি। এ ‍নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির তিন সদস্যের তদন্ত দল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আর্থিক বিধিবিধান অনুসারে ভর্তি ফরম বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রাখতে হয়। বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ দিয়ে পরীক্ষার সব আয়োজনের ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তা করেছে কিনা সেটি তদন্ত করতেই ওই কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও বর্তমানে রুটিন দায়িত্বে নিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হজয়নি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *