নিউজ ডেষ্ক-বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় মাছে ভরপুর। একসময় খালে-বিলে, হাওর-বাঁওড়ে প্রচুর পরিমাণে শোল, বোয়াল, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে তা আর তেমন দেখা মেলে না। সম্প্রতি এ মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানিরা। ফলে এখন থেকে পাতে দেখা মিলবে জনপ্রিয় মাছ শোল।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। মাছটিকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে সম্প্রতি এর প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেন তারা।
গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো.সাইফুল ইসলাম।
গবেষক দলের প্রধান ড. মো. শাহা আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্যান্য মাছের মতো খৈল/কুঁড়াজাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে পোনা তৈরির জন্য মা-বাবা অর্থাৎ ব্রুডমাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদেরকে প্রোটিনসমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়েছে। অতঃপর ব্রুড তৈরি করে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া এ মাছটি স্বজাতি ভোজী হওয়ায় একটি আরেকটিকে ধরে ধরে খায়। ফলে পোনা বাঁচিয়ে রাখাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শোল মাছের বাজার মূল্য অনেক বেশি। তাই মাছটির পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় দেশে শোল মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, নেত্রকোনা ও হাওরাঞ্চল থেকে সুস্থ-সবল দেশি শোল মাছ সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে প্রতি শতাংশে ১০-১২টি হারে মজুত করে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করে প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়। শোল মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে ও এপ্রিল-আগস্ট এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী মাছ আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এ মাছের ডিম্বাশয় এপ্রিল মাস থেকে পরিপক্ব হতে শুরু করে। প্রতি গ্রাম স্ত্রী মাছে গড়ে ৮০-৯০টি ডিম পাওয়া যায়।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে শোল মাছের নিবিড় চাষ করা হয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেশীয় শোল মাছের পোনা না থাকায় এ মাছটিকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইনস্টিটিউটটি হতে অনেক বার প্রচেষ্টার পর চলতি বছরে সফলতা আসে। পোনা উৎপাদিত হওয়ায় শোল মাছকে এখন চাষের আওতায় আনা যাবে।
তথ্যমতে, প্রাইভেট খামারিদের উদ্যোগে চাষের জন্য ২০১১ সালে ভিয়েতনামী শোল মাছের পোনা দেশে আমদানি করা হয় এবং চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু বিদেশি এ মাছটি দেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক/দুই বছরের মধ্যে দেশীয় শোল মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে। চাষের মাধ্যমে এ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ মাছটি রপ্তানি করা যাবে।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, শোলমাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ গবেষণার পর চলতি এপ্রিল মাসে শোল মাছের প্রজনন বিষয়ে সফলতা আসে।