নিউজ ডেষ্ক- মুসলিম বিশ্বের পবিত্র ইদুল আজহার মাত্র আর কয়েকদিন বাঁকি। ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে রাজশাহীর সিটি পশুর হাট। সপ্তাহের দু-দিন রোববার ও বুধবার ছাড়াও ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই বসবে হাট। বেচা-কেনা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকেই। বিক্রেতারা বলছেন, গতবছরের তুলনায় ভালো দামে গরু-মহিষ বিক্রি করছেন তারা। বড় গরুর তুলনায় ৩ থেকে ৫ মণ ওজনের মাঝারি গরু চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাঁকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জুন ২০২২) হাটে দেখা গেছে গরু-মহিষের সরবরাহ বেশ ভালো। দূর-দূরান্তের পাইকাররা এসেছেন কোরবানির পশু কিনতে। তবে, বড় গরুর বেচা-কেনা কম হতে দেখা গেছে। মাঝারি ও কোরবানিযোগ্য ছোট গরুর চাহিদা অপেক্ষাকৃত বেশি। আমদানি বেশি হওয়ার সাথে সাথে দামের ক্ষেত্রে প্রতি গরুতে গতবারের তুলনায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে পশুর সরবরাহ ছিল চোখে পড়ার মত। বিক্রেতারা পশু নিয়ে অপেক্ষা করছেন। উত্তপ্ত রোদে দরদর ঘামছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। চলছে দামাদামি; দামে হলেই ছাড়ঘরের দিকে ছুটছেন তারা। আনুমানিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ ওজনের ষাঁড় গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এই হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন নওগাঁ জেলার মান্দা চৌবাড়িয়ার মালশিরা এলাকার মকবুল হোসেন। গরুর দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি গরু কিনে এসে হাটে এই বিক্রি করেন। ঈদের হাট জমজমাট থাকে আর প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন তিনি। লাল রঙের এক ষাঁড় গরুর আনুমানিক ওজন হবে জানালেন ৩ মণ ১০ সের। দাম হাঁকলেন ৭৮ হাজার।
দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কুরবানির সময় বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাটে আসেন। পছন্দের গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। ওজনের তুলনায় গরুর দাম সমসময় হয় না। পছন্দের উপর দু-পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনেন ক্রেতারা।
রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুর এলাকার আইনাল হক গরু বিক্রি করতে এসেছেন হাটে। হাটের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর ৩ থেকে ৫ দিন জমজমাট হবে হাট। বিশেষ করে কুরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে হাটে গরু কিনতে আসেন গেরস্ত পার্টিরা। কুরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনে বাড়িতে কয়েকদিন যত্ন করেন। স্থানীয় গেরস্ত মানুষেরা কিছু কিছু হাটে আসছেন। এখন পাইকার আছে হাটে।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা ক্রেতা মুকিম হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তারা কোরবানির পশু কিনে থাকেন। প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার গরু কিনেন। এবার এক সপ্তাহের আগেই এসেছেন। হাটে পছন্দসই ভালো পশু আছে। দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি গরু দেখেছেন। দামের তুলনায় একটু চড়া মনে হলেও সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা তেমন মনে করবেন না বলেই ধারণা করছেন তিনি।
গরুর খামারি মেহেদী জামান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, গতবারের চেয়ে এইবার গরু প্রতি দাম বেশি আছে। গরুর উৎপাদন খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি গরুর দাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরুর খাদ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। আগে যেই গমের ভুষি ১২’শ টাকা ছিলো সেই ভুষি এখন ১৬৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। একটা গরু প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ টাকার খাবার খাচ্ছে সেই হিসেবে দাম কতটুকু বেড়েছে আপনারা হিসেব করেন। প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রাজশাহী সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ঈদের আগে সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও পশুর আমদানি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। করোনার কারণে গতবার বাইরে থেকে ব্যাপারীরা সেভাবে আসতে পারেননি। এবার সবাই আছে। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা দেখেশুনে গরু কিনছেন। বাইরের ক্রেতারাও গরু-মহিষ কিনছেন।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২ টি গবাদি পশু। ১৬ হাজার ৭৯ টি খামারির এসব পশু। পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। বাইরে থেকে কোন পশু আসবে না। তাই খামারিরা ভালো দাম পাবেন। এইবার কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। নিজেদের পশু দিয়েই দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটাতে পারবে। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু আছে।