নিউজ ডেষ্ক- চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের চক মিল্লীকপুর গ্রামের ঘাস চাষি রাজ্জাক আলী। প্রথম অবস্থায় মাত্র ১০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ শুরু করেন।
একবার মূল রোপণের পর একটানা চার বছর ঘাস বিক্রি করছেন তিনি। প্রথম অবস্থায় তার বাড়িতে একটি গাভী ও তিনটি ছাগলের বাৎসরিক খোরাক মিটিয়ে এক লাখ চার হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করেন। খরচ হয় মাত্র সাত হাজার টাকা। তার দেখাদেখি তার বাড়ির পাশের প্রতিবেশীরা মাঠের পর মাঠ ঘাস চাষ শুরু করেছেন।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম মিয়া। গরু পালনের পাশাপাশি করছেন বাণিজ্যিক ভাবে ঘাস চাষ। ৫ টি গরুর খাদ্যের যোগানের পাশাপাশি বিক্রি করে সংসারে আসছে বাড়তি আয়।
শুধু রাজ্জাক কিংবা আলীম নয়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাস চাষ করে সফলতার হাসি হাসছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে স্বল্প জমিতে ঘাস চাষ করে লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তবে ঘাস চাষে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ কোন পরামর্শ দেয়না বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
দেশে বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ হয়। তার মধ্যে নেপিয়ার, পারা, জাম্বু, জার্মান ও পাপচন ঘাস অন্যতম। এসব জাতের মধ্যে দেশে নেপিয়ার ঘাস খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নেপিয়ার ঘাস খুব ভালো হয়। কচি অবস্থায় পুষ্টিমান বেশি থাকে। গবাদি প্রাণির জন্য নেপিয়ার অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ এ ঘাসটি অল্প সময়েই বৃদ্ধি পায় এবং চার বৎসর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলায় জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গরু-ছাগল চরানোর জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই গরু-ছাগলের দৈহিক যোগান দিতে উপজেলা জুড়েই পতিত জমিতে, গ্রামের আনাচে কানাচে ও রাস্তার ধারে প্রচুর পরিমাণে ঘাস চাষ করছেন কৃষকরা।
চারণ ভূমি না থাকায় কৃষক অভাবের তাড়নায় অনেক গরু-মহিষ কম দামে বিক্রি করে দেন। অনেকের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া খাদ্যাভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই দেশে এরকম লাখ লাখ একর পতিত জমি সারা বছরই খালি পড়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই এই জমি কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করা যায়।
একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ঘাস চাষ খুবই লাভজনক। কৃষকরা নিজ নিজ উদ্যোগে প্রতি বছর নতুন নতুন ক্ষেত চাষের জন্য প্রস্তুত করলেও উপজেলা কৃষি অফিস এমনকি মাঠ পর্যায়ের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা তো দূরের কথা, ডাকলেও পরামর্শ দেয়ার সময় তাদের নেই ।
একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সফলতার চাবিকাটি গৃহপালিত পশু পালন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধ জাতের গাভী পালন। এমনকি ছাগল পালনও লাভজনক। পরিবারের কর্তার পরিশ্রমের একটি অংশ দৈনন্দিন গৃহপালিত পশুর জন্য ব্যয় করে গৃহিণীদের পরিশ্রমে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন কৃষকরা। ঘাস চাষি কৃষকদের দাবি কৃষি বিভাগ উন্নত প্রযুক্তি ও চাষের উপরে বিভিন্ন ব্যবহারিক সেমিনার, পরামর্শ দিলে গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তির মূলমন্ত্র হবে ঘাস চাষের সঙ্গে পশু পালন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নয়। তবে ঘাস চাষের ব্যাপারে কৃষকরা পরামর্শ চাইলে অবশ্যই পরামর্শ দেওয়া হবে।