গোসলের সময় যেসব অঙ্গ পরিষ্কার না করলে মারাত্মক বিপদ!

জীবনধারা

কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণীই গোসল করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোসল সপ্তাহে কতদিন করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। এটি নির্ধারিত হতে হবে একজন মানুষের শারীরিক গঠন, বয়স, পরিবেশ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী। তবে গোসলের সময় শরীরের কয়েকটি অঙ্গ পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। না হয় হতে পারে মারাত্মক বিপদ!

ডার্মাটোলজিস্টরা বলেন, স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর ত্বকে সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরের তেল, ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য মাইক্রো-অরগার্নিজমের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকা জরুরি। ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি গোসল করলে সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সপ্তাহে কয়েকবার গোসল যথেষ্ট। সবচেয়ে ভালো হয় একদিন পর একদিন গোসল করতে পারলে।

তবে প্রতিবার গোসলের সময় দেহের কয়েকটি অংশ পরিষ্কার করা অবশ্যই উচিত। এমন ৫টি অপরিহার্য অঙ্গ রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত পরিছন্ন রাখা দরকার। আসুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।

নাভির যত্ন নিন
নাভিকে বলা হয় শরীরের কেন্দ্রবিন্দু। নাভি কেবল পেটের ওপর একটি ছোট্ট বিন্দু নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে সক্ষম। কিন্তু নাভিতে খুব তাড়াতাড়ি ময়লা জমে। যদিও আমরা সারা শরীরের যত্ন নিলেও নাভির কথা বেমালুম ভুলে যাই। তাই তো নাভিতে নিয়ম করে পরিষ্কার রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট তুলায় কয়েক ফোঁটা তেল নিয়ে নাভিতে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত এমন অভ্যাস করলে নাভিতে জমে থাকা ময়লা এবং মৃত কোষের স্থির ধুয়ে যায়। তবে খুব জোরে নাভিতে তুলা ঘষবেন না। এতে আপনি ব্যথা পেতে পারেন। তাই আলতো চাপ দিয়ে নাভি পরিষ্কার করাই সব চেয়ে ভালো উপায়।

কানের পেছনে পরিষ্কার রাখা
কানের পেছনে নিয়মিত পরিষ্কার না হলে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে জানেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, কানের পেছনের অংশ নিয়মিত পরিষ্কার না করলে সংক্রমণ বা চর্মরোগ হতে পারে। না হলেও দুর্গন্ধ হবেই। তাই অবহেলা না করে শুরুতেই এর প্রতি সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানের পেছনের ভাঁজযুক্ত অংশে অনেক তেল গ্রন্থি রয়েছে। এতে ঘাম ও সেবাম জমে। যা পরে ব্যাক্টেরিয়াতে পরিণত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এগুলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাই নিয়মিত কানের পেছনের অংশ পরিষ্কার রাখা জরুরি। এর জন্য গরম পানিতে ডুবানো কাপড় নিয়ে আপনার কানের পেছনে হালকা ঘষতে পারেন।

নখ পরিষ্কার রাখা
হাত-পায়ের নখ নিয়ে ছেলেরাই বেশ উদাসীন থাকেন। যার ফলে নখের ওপর কালো বা লালচে দাগ পড়ে যায়। অনেক সময় নখ ভেঙে যায় বা নখের কোনা ধারাল থাকলে আঙুলের মাথায় ক্ষত সৃষ্টি করে। যেখান থেকে পরে আঙুলের ভেতরে পুঁজ বা ঘা হয়ে যেতে পারে। আবার নখ বড় রাখলে সেটা শরীরে অনেক ধরনের রোগের কারণ হয়ে ওঠে বলে চিকিৎসকরা বলে থাকেন। তাই নখ পরিষ্কার রাখা ও নখ কাটা দরকার নিয়মিত। নখের ময়লা খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া যাদের নখের কোনায় পুঁজ বা ক্ষত হয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই প্রতিকারের ব্যবস্থা করবেন। না হলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

পায়ের পাতা
পায়ের পাতা ও নখ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, পায়ের মৃত কোষ ও ঘামের কারণে ফাঙ্গাস ও দুর্গন্ধ দেখা দেয়। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার জন্যই কেবল তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি নয়। পায়ের ফাঙ্গাস, নখ ও গোড়ালিতেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে অনেক সময় সার্জারির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। পায়ের পাতা ভালো রাখতে তা স্ক্রাব করা উচিত। তবে কেবল গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রেখে পরিষ্কার করলে হবে না। লন্ডনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের চিকিৎসক ক্রিস এয়ারির মতে, নখের নিচ ও আঙ্গুলের মধ্যে ফাঙ্গাস দেখা দিতে পারে এবং তা পরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

জিভ
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন যদি জিভ সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে মুখে দুর্গন্ধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পড়তে পারে। তাদের মতে, জিভে নানারকম ব্যাকটেরিয়া জমে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন অবশ্যই জিভ পরিষ্কার করা দরকার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *