গুরুত্বপূর্ণ তিন ইস্যুতে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সভা-সমাবেশসহ রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলায় জেলায় সমাবেশ হবে। গতকাল বুধবার কৃষক দলের এক অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের বর্তমান প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে কর্মসূচি করা হবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ভয়াবহ ঘটনা নিয়েও আলোচনাসভা হবে। এ ছাড়াও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি
ছাত্রলীগ-পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, মামলা, এক পুলিশ সদস্যের সাম্প্রদায়িক মন্তব্য, নারী নির্যাতনের ঘটনায় দুদিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে মানববন্ধন। এসব কর্মসূচি সফল করতে গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথসভা করে বিএনপি। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন। সভাসূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১২ মার্চ পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। আজ সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হওয়ায় গত মঙ্গলবার রাজপথে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটি। ভার্চুয়াল ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দলের শীর্ষ নেতা যে কোনো ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে থাকতে চান। এই অবস্থায় দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তবে সরকার বাধা দিলে বা নতুন করে কোনো পণ্য বা অন্য কিছুর দাম বাড়ালে শক্ত কর্মসূচিও দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে নীতিনির্ধারকদের।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি হওয়ায় জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে অথচ সরকার নির্বিকার। তিনি জানান, এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মূল্যহ্রাসের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আগামী সপ্তাহে দেশব্যাপী মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, হাটসভা ও হ্যান্ডবিল বিতরণের কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও মার্চে মহান স্বাধীনতা দিবস কেন্দ্র করে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি করবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মাঠে নেমে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করা হবে। এজন্য বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সব কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলার নেতাদের সভা-সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ডাক দেবে দলটি। সে চিন্তা থেকেই বিএনপি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেন, তারা দ্রুত ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।
তবে ২০-দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বৃহৎ জোট বা ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ভূমিকা তাদের কাছে সন্তোষজনক নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তারা কথা বলার চেষ্টা করছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেন, বিএনপি কী করতে চায়, তা তাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।
যদিও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, তারা এ পর্যন্ত অন্তত ৩০টি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। আরও ২৫টি দল ও বেশ কয়েক বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে এই অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় শেষ করতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, আমরা ডান, বাম সবাইকে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে নামতে চাই। এক ধরনের ঐক্য হয়ে গেছে। কারণ অনেকেই রাষ্ট্রপতির ইসি পুনর্গঠন সংক্রান্ত সংলাপে যায়নি। আবার যারা গিয়েছিল তারাও সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেনি। এর পরও যদি কেউ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবির পক্ষে রাজপথে আসতে চান, তাদেরও চাই। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।