‘মৃত্যু’র পাঁচ বছর পর রকিবুজ্জামান রিপন নামের এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়ার একটি দল গাজীপুর থেকে তাকে উদ্ধার করে।
রকিবুজ্জামানকে অপহরণ ও খুন-গুম করার অভিযোগে তার বাবা একটি মামলার করেছিলেন রিপনের শ্বশুর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া রকিবুজ্জামান রিপন (৩০) মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের দত্তপাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে। ২০১৭ সালে গাংনী উপজেলার ভরাট গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন রিপন। রিপনকে ২২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তা।
পিবিআই কুষ্টিয়ার পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, রকিবুজ্জামান রিপন গাংনীর ভরাট গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে শ্যামলী খাতুনকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করছিল। তাদের ঘর আলো করে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হওয়ায় ২০১৭ সালের ৮ জুলাই নিরুদ্দেশ হন রকিবুজ্জামান রিপন। রিপনের কোন খোঁজ খবর না পাওয়ায় তার বাবা মনিরুল ইসলাম রিপনের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং চাচা শ্বশুরের বিরুদ্ধে মেহেরপুর আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে রিপনকে জীবিত অথবা মৃত কোনো ভাবেই উদ্ধার করতে না পেরে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত থানা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুলিশ সুপার, পিবিআই কুষ্টিয়াকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন
আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ তদন্ত শুরু করেন এবং সোর্স নিয়োগ করে খুঁজতে থাকেন রিপনকে।
কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিপনের পরিবার ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপনের জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। সে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে চাকরি করছে মর্মে নিশ্চিত হয় পিবিআই।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামানসহ একটি টিম ওই টেক্সটাইল মিলের সামনে অবস্থান নিয়ে রিপনকে উদ্ধার করে। রিপনের প্রাথমিক জবানবন্দী শেষে মঙ্গলবার মেহেরপুরের বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হয়।
পিবিআই পরিদর্শক আরো জানান, ভিকটিম রিপন কৌশলে মো. শরিফুল ইসলাম ছদ্মনাম ধারন করে গাজীপুর শ্রীপুরে অবস্থান করে। সেখানে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে টেকনিশিয়ান পদে চাকরি নেন এবং গেল বছর মার্চ মাসে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মনমথ কুঠিপাড়ার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিমলা আক্তারকে (২০) জামালপুরের সরিষাবাড়ির একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন। সে ঘরেও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। যার বয়স ৬ মাস।
এদিকে রিপনের উদ্ধারে স্বস্তি নেমে এসেছে বাবা ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মাঝে।
রিপনের বাবার দায়ের করা মামলায় রিপনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় মামলার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান পিবিআই পরিদর্শক।