নিউজ ডেষ্ক- ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়া ফেলেছে পিংক জাতের কাঁঠাল। একে ভিয়েতনামী কাঁঠাল বলেও ডাকা হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয়-এই জাতের কাঁঠাল ১২ মাস ফলন দিতে সক্ষম। বারমাসি আমের ন্যায় বারমাসি কাঁঠাল কৃষকের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি করছে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে এ কাঁঠাল চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এছাড়া কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবেন। সেজন্য সহযোগিতা করা হবে কৃষি বিভাগ থেকে। এরই মধ্যে ৫০ কৃষকের মাঝে গ্রাফটিংয়ের (কলম) চারা বিতরণ করেছে জেলা হর্টিকালচার সেন্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম থেকে পিংক জাতের কাঁঠালের একটি চারা নিয়ে আসে জেলা কৃষি বিভাগ। পরে তা বেশ যত্ন করে লাগিয়ে দেন ঠাকুরগাঁও হর্টিকালচার সেন্টারে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে গাছটি ফল দিতে শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো ফলন হওয়ায় পরে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। নতুন সম্ভাবনা জেগে ওঠা এই কাঁঠাল চাষকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরাও।
সদর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কৃষক আরিফ হোসেনের পুকুরপাড়ে লাগানো গাছের কয়েকটিতে কাঁঠাল ধরেছে। আকারে বেশ বড় ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় উৎসুক মানুষ অসময়ের কাঁঠাল দেখতে আসছেন। আর কিছুদিন পরে কাঁঠালগুলো খাওয়ার উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন আরিফ। তিনি বলেন, প্রতিটি কাঁঠাল দেখতে আমাদের দেশীয় কাঁঠালের মতোই। এই কাঁঠালের আঠা নেই। তাই বাজারে এর বাড়তি কদর রয়েছে। তবে খেতে রসালো না হলেও কিছুটা চিবিয়ে খেতে হয়। একই এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা ফারুক হোসেন নরসিংদী জার্নালকে বলেন, কাঁঠাল পুষ্টিকর ফল হলেও আমরা ১২ মাস এ ফলটি পাই না। এখন যেহেতু ১২ মাস কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমি নিজেও এই বাগান করব।
ঠাকুরগাঁও হর্টিকালচার সেন্টারের নার্সারি তত্ত্বাবধায়ক জামিল উদ্দীন বলেন, ভিয়েতনামের পিংক জাতের গাছটিতে সারা বছর ধরেই কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের বাইরেও অন্যান্য সময় ধরে উৎপাদিত কাঁঠালও হবে খুব সুস্বাদু। এতে যেমন দেশের লোকজন সারাবছর ধরে কাঁঠালের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন, তেমনি অধিক মূল্যে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন। বীজ থেকে চারা উৎপাদনে গুণগত মান ঠিক থাকে না। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করলে শতভাগ গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। এ পদ্ধতির ফলে রোপণের কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল। মৌসুম ছাড়া কাঁঠাল পাওয়া যায় না। তাই যে মৌসুমে আমাদের বাজারে দেশি ফলের ঘাটতি থাকে, সে সময় চাষ করা যায় এমন জাতগুলোর সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করা জরুরি। এই কর্মকর্তা নরসিংদী জার্নালকে আরো বলেন, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের পুষ্টিগত অবস্থার উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছে জেলা কৃষি বিভাগ। আগ্রহী চাষিরা এ ভিয়েতনামের কাঁঠাল চাষে এগিয়ে আসছেন। সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এই কাঁঠাল ব্যাপকভিত্তিতে চাষের উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের মানুষ সারা বছর ধরে এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।