কুষ্টিয়ার পেঁয়াজ চাষিদের মুখে হাসি নেই

কৃষি ও প্রকৃতি

নিউজ ডেষ্ক- কুষ্টিয়া জেলায় এবার পেঁয়াজের ভালো ফলন হলেও ক্রমাগত দাম কমতে থাকায় পেঁয়াজ চাষিদের মুখের হাসি ম্লান হতে বসেছে। অব্যাহত দর পতনের কারণে চাষিদের উৎপাদন খরচ তুলে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম কমতে কমতে খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর এক মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। চাষিদের দাবি গত দুই বছরের তুলনায় এবার তারা পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কম পাচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলায় এবার চলতি রবি মৌসুমে (১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৩৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এদিকে নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতভাবে দাম কমতে শুরু করেছে।

গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে প্রকারভেদে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমতে থাকায় এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার মতো নিজেদের সক্ষমতা না থাকায় চাষিরা মাঠ থেকে মাত্র ১০-১২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় চাষিদের উৎপাদন খরচ তোলায় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমারখালী উপজেলার জোতমোড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ফরিদ শেখ জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর গড়ে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ৭০ থেকে ৮০ মণও পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক ও পরিবহন বাবদ সব মিলিয়ে খরচের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে হাটে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের ১০ থেকে ১৮ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

গতবছর এই সময় পেঁয়াজ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের হাট বসে প্রতি শুক্রবার কুমারখালী উপজেলার পান্টিতে। এই হাটে বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় তামাক চাষের এলাকা হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের কামারডাঙ্গা গ্রামের অন্তত ৪০০ পরিবার এবার তাদের জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ওই গ্রামের বৃদ্ধ পেঁয়াজ চাষি আব্দুস সাত্তার জানান, তামাক চাষ বাদ দিয়ে লাভের আশায় এই গ্রামের প্রায় সবাই এবার পেঁয়াজ চাষ করে। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম না থাকায় তারা এখন চরম হতাশ। বাজারে এভাবে দাম কমতে থাকলে তারা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় (খামারবাড়ির) অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (ফসল) বিষ্ণুপদ সাহা জানান, বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। এ অবস্থায় কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়বেন। তাই তিনি বিক্রি না করে কৃষক পর্যায়ে দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *