নিউজ ডেষ্ক- রমজান মাসে প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও কামাচার বর্জনের মাধ্যমে সিয়াম পালন করা হয়। এটিই এ মাসের প্রধান ও প্রথম পালনীয়। তবে পাশাপাশি আরেকটি ইবাদত অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এ মাসের সঙ্গে।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দিনে রোজা রেখে ও রাতে এশার সালাতের পর সারা দিনের ক্লান্তি উপেক্ষা করে দীর্ঘক্ষণ তারাবিহর নামাজ আদায় করেন। মসজিদে মসজিদে কুরআন মাজিদের তিলাওয়াতে বেহেশতি সুর মূর্ছনায় মুগ্ধ হন মুসল্লিরা।
জামাতের সঙ্গে সালাতুত তারাবিহর বর্তমান নিয়মটি চালু হয়েছে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সময় থেকে। এর আগে অর্থাৎ রাসূলে পাক (সা.) ও হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর সময়ে এমনকি হজরত ওমর ফারুকের খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও মুসলমানরা রমজানের রাতগুলোতে এশার নামাজের পর অতিরিক্ত যে সালাত আদায় করতেন, তা একাকী করতেন।
তবে নবি করিম (সা.) রমজানে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন এবং এ জন্য অশেষ পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করা যায়।
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) রমজানের রাতগুলোতে ইবাদত করার জন্য আমাদের উৎসাহ দিতেন। কিন্তু জোরালো আদেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি রমজানে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে কিয়াম করবে, তার ইতঃপূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর সময়ে একই নিয়ম চালু ছিল। এটিই বহাল ছিল হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও। (বুখারি শরিফ)
হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সময়ে জামাতের সঙ্গে সালাতুত তারাবিহ চালু হওয়া সম্পর্কে একটি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন আবদুর রহমান ইবনে সায়েব ইবনে আবদুল কারি নামে এক তাবেয়ি। তিনি বলেন, রমজানের এক রাতে হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সঙ্গে আমি মসজিদে নববিতে গেলাম। দেখলাম লোকেরা বিক্ষিপ্তভাবে ইবাদত করছে। কেউ একাকী, আবার কারও সঙ্গে কয়েকজন যোগ দিয়ে নফল নামাজ আদায় করছেন। হজরত ওমর (রা.) বললেন, এদের সবাইকে একজন তিলাওয়াতকারীর পেছনে একত্র করে দিলে ভালো হতো। পরে হজরত উবাই ইবনে কা’বকে ইমাম নিযুক্ত করা হলো। কেননা হজরত উবাই (রা.) ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে শুদ্ধ ও মধুর কণ্ঠে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতকারী।
এরপর একদিন আবারও বের হলেন হজরত ওমর (রা.)। বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বলেন, হজরত উবাই (রা.)-এর ইমামতিতে তখন এ নামাজ চলছে। পরিবেশটি দেখে হজরত ওমর মুগ্ধ হলেন এবং বললেন, চমৎকার আবিষ্কার এটি। তবে তিনি বললেন, তোমাদের ঘুমের সময়টা তোমাদের জেগে থাকার সময় থেকে ভালো অর্থাৎ হজরত ওমর (রা.)-এর ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল লোকেরা প্রথম রাতে এশার নামাজের পরই ঘুমিয়ে পড়ুক আর মধ্য রাতের পর ইবাদতে মশগুল হোক। কিন্তু তা সাধারণভাবে কষ্টের কাজ। লোকেরা এমনটি অভ্যাস করতে পারবে বলে তিনি মনে করলেন না। তা ছাড়া একাকী দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করার চেয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা কম কষ্টকর। তেমনি কুরআন মাজিদের বড় বড় সুরা সবার মুখস্থ থাকে না। এসব দিক বিবেচনা করে সবার জন্য যা সহজ হয় তারই ব্যবস্থা করলেন তিনি।
এমন একটি বর্ণনাও পাওয়া যায় যে, হজরত আলী (রা.) এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর। এভাবে যে নামাজ চালু হয় তা তারাবিহ নামে আখ্যায়িত হওয়ার কারণ মাঝখানের বিরতিগুলো। ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে গিয়ে প্রতি চার রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার রীতি ছিল। আরবি তারবিহা অর্থ বিশ্রাম। আর তারবিহা শব্দের বহুবচন তারাবিহ। সালাতুত তারাবিহ জামাতের সঙ্গে আদায়ের আয়োজন থাকায় অনেক মানুষ একই সঙ্গে কুরআন মাজিদ শুনতে শুনতে দীর্ঘ সময় ধরে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তেমনি সম্মিলিত আকারে আদায়ের কারণে রোজাদার মুসলমানদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে ঐক্য ও সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি