নিউজ ডেষ্ক- বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুবিন ফারহানা বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার নামে দায়মুক্তির দেওয়া অনৈতিক। টাকা ফেরত আনতে নয়, পাচারকারীদের নিরাপত্তা দিতেই এই ব্যবস্থা। এটা মানিলন্ডারিং আইনেরও পরিপন্থী। বাংলাদেশের ঋণ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটেও কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন।
রোববার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রুমিন ফারহানা প্রস্তাবিত বাজেটকে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পথে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার বাজেট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, করোনায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। বর্তমান মূল্যস্ফীতি সবক্ষেত্রে বেড়েছে। সংকটের তীব্রতা সরকার স্বীকার করে না। দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ করা এবং দেশে ফেরত আনার নামে সব থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর ধার্য্য করে প্রশ্নাতীতভাবে সেগুলো প্রদর্শনের সুযোগ দেওয় হয়েছে। এতে টাকা ফেরত আসার কোনো কারণ নাই। কারণ যারা টাকা বিদেশে পাচার করে তারা ফেরত আনার জন্য টাকা পাচার করে না। এটি করা হয়েছে যাতে কখনো কোনো দেশ যদি এমন টাকা পাচারকারীদের ধর-পাকড় শুরু করে তখন যেন তারা নিরাপদে টাকা দেশে আনতে পারে।
বাংলাদেশ খুব সতর্ক না হলে শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রীলংকার পর্যালোচনায় যখন বাংলাদেশের কিছু অর্থনীতিবিদ তাদের স্বার্থের চিন্তায় বা ভয়ে বলেছেন বাংলাদেশের শ্রীলংকার পরিস্থিতি হবার কোনো সম্ভাবনাই নাই। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ আমাদের স্পষ্ট জানিয়েছেন বাংলাদেশের জন্য অবশ্যেই ঝুঁকি আছে। বাংলাদেশ যদি খুব সতর্ক না হয় তাহলে দ্রুতই শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী ৬টি চ্যালেঞ্জের প্রথমটিতেই বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। এই খাতে যেটা চিন্তা করেছেন তাতে অর্থমন্ত্রীর অর্থনীতি বোঝাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
রুমিন ফারহানা বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হবার কথা। এই দেশে যা হয় সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীর কারণে দাম যত না বাড়ার কথা বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে এসব নিয়ন্ত্রণের কথা বাজেটে নাই। যখন মূল্যস্ফিতি ৬ শতাংশের কিছু বেশি তখন অর্থনীতির বোদ্ধারা বলছে এই মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণেরও বেশি। সমস্যার তীব্রতা যে সরকার বুঝে না, সেই সরকার সমস্যার সমাধান কীভবে করবে জানি না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে বড় অংকের টাকা আমদানির নামে ওভার ইনভয়েচিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। নির্বাচন এলেই এদেশে টাকা পাচার বাড়ে, এটি গ্লোবাল ফাইনান্স ইনটিগরিটির রিপোর্ট। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে টাকা পাচার ডাবল হয়ে গিয়ে এক লাখ কোটি টাকা ওই এক বছরেই পাচার হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে সরকার জাতিসংঘে আমদানি রফতানির তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। পাচারের এই তথ্য লুকানোর চেষ্টা প্রমাণ করে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই এই টাকার হিংস্যা পায়।
রুমিন ফারহানা বলেন, গত বাজেটের মতো এবারো রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পায়রা বন্দর করার প্রয়োজন ছিল না। রামু থেকে কক্সবাজার রেল দরকার ছিল না। আখের গুছিয়ে নিজেদের অনাগত বহু প্রজন্মের রাজকীয় জীবন-যাপন নিশ্চিত করার পর দেশ শ্রীলংকা হলে তাতে কি বা আসে যায় ক্ষমতাসীনদের। তাই এই বাজেট জনগণের স্বার্থবিরোধী।