নিউজ ডেষ্ক- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০১৯ সালে করোনা শুরু হওয়ার পরে আমি দেখেছি এর কিছু-কিছু মিস ইউজ-এবিউজ বা অপপ্রয়োগ হচ্ছে।
সবাই তো স্বীকার করে না। হ্যাঁ, লিজ ট্রাস সরি বলেছে। কিন্তু, এখন এই অপপ্রয়োগ অনেকাংশে কমে এসেছে। থানাই গেলেই মামলা নেয় না।
শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে ঢাকা আর্ট গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ’ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাক স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য হয়নি। এটি জনস্বার্থেই হয়েছে। সংবিধানে ১৯৭৫ এর পর অনেক খেলাধুলা করা হয়েছে। কাজেই, যদি মনে করেন, এই আইন সাংবাদিকদের টার্গেট করে, তা না। যদি, এমন হয়, আপনাকে অপরাধের ভিত্তিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেক্ষেত্রে এই আইন জরুরি।
মন্ত্রী বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের আইন আছে, সেটা কোর্টে জাজ হওয়ার সুযোগ আছে। কোনো অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পড়ছে কিনা সেটা নির্ধারণ করার জন্য একটা সেন্টার থাকবে। তারপরে, সেটা আদালতে গড়াবে।
তিনি বলেন, ১৯৯০-৯২ সালে আমরা যখন উকালতি করতাম, ম্যাক্সিমাম ডিটেনশনের মামলা পরিচালনা করতাম। আজকে দেখেন ডিটেনশন নেই। তখন এমন ছিল যে ৩০ দিন বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখতে পারে। পরবর্তীতে, আরও ৬০ দিন আটক রাখতে পারবে। এখন কিন্তু আর সেটি নেই।
কার্টুনিস্ট কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে ৩০০ দিন আটক রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যেকোনো ইমপ্লিমেন্ট এর সময় কিছু অপব্যবহার হয়। আপনি কি মনে করেন আমরা কান বন্ধ করে রেখেছি। উই আর ট্রাইয়িং টু সলভ দিজ। আরেকটা বিষয় হচ্ছে অজামিনযোগ্য মানে এই না যে, সে কোনোদিন জামিন পাবে না। তাকে পুলিশ থানা থেকে তাকে ছাড়তে পারবেন না। বিজ্ঞ আদালত বিবেচনা করবেন তাকে জামিন দেবেন কি দেবেন না। আপনাদের এই আইন ভীতি দূর করার জন্য কি কি করা দরকার, আমরা আপনাদের সঙ্গে বসে করব। ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ডেটা কন্ট্রোল করার জন্য এই আইন না, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। বিশ্বের যে মান, তার সঙ্গে মিলিয়ে আইন করা হবে।
বৈঠকে মূল নিবন্ধ পাঠ করেন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
তিনি বলেন, এ আইনের চার বছর হয়ে গেল। দুই বছর আগে এই আইনে আটক সাংবাদিক মুশতাকের মৃত্যু হয়। বন্ধ হয়ে গেছে কার্টুন। পত্রিকাগুলোতে প্রায় উঠে গেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। উপাত্ত সংরক্ষণ আইন এটি মানুষের ক্ষতি করবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন কথা বলছে।
আলোচনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংস্কৃতিজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমি যদি নাটকে এমন কিছু দেখাই, মুচির চরিত্র, পুলিশের চরিত্র। যদি পুলিশের চরিত্র একটু নেগেটিভভাবে তুলে ধরি, মামলা দিয়ে দিচ্ছে।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, আইনের একটা উদ্দেশ্য থাকে, সেটা হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা করা। এখন সেই আইন যদি জনগণকে তার স্বাধীনতা বন্ধ করতে চায়, তাহলে সেই আইন আর জনগণকে সুরক্ষা করতে পারে না। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই আইন ব্যবহৃত হয়। আরেকটা, জিনিস হলো আইন যদি খুব বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে সরকারের দুর্বলতা আছে।
বলা হয়েছিল যে, জনগণকে হয়রানির জন্য এই আইন ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু, একজন থানার কর্মকর্তা হলেন, এই আইনের প্রয়োগকারী। মুশতাক যে মারা গেলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ খুবই ঠুনকো। গণমাধ্যমের অংশ বলছে এই আইন গণবিরোধী, সরকার বলছে জনগণের জন্য। তাহলে তো পত্রিকাগুলোকে শুধু বিজ্ঞপ্তি ছাড়তে হবে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধ করতে হবে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সায়মান বলেন, সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এই আইন অনুসরণ করা যাবে না। তার মানে, সাধারণ লোকজনকে এই আইনে জড়ানো যাবে। এই অ্যাপ্রোচ নিয়ে আমার আপত্তি আছে।
আর্টিকেল-১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, এই আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের আটকের জন্য সরকারের অনুমতি লাগে না, জামিন অযোগ্য এরকম অনেক ধারা আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এরকম আইন করা হয়েছে। এখন আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি আইনের কথা বলা হচ্ছে। ডেটা অ্যাক্ট নামে একটা আইন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকার সব লোকের ডাটা পাবে।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, এ আইনটা সময়োপযোগী আইন। সবাই বলছে এই আইন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে হয়েছিল। কিন্তু, না। এই আইনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সালে। এ আইনের ধারা অনুযায়ী সাইবার বুলিং এর অভিযোগে ১৩ হাজার জনের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না বলেন, এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করেন। সন্ধ্যার পর কেন আপনারা বাসায় যাবেন। আপনি রেইড করতে যাবেন, আমি হার্টের রোগী। আমার পাশে ছোট বাচ্চা, সে তো ভয় পাবে।