কাগজ নেই, পাকিস্তানেও লংকার দশা

আন্তর্জাতিক

নিউজ ডেষ্ক- শ্রীলংকার দশা শুরু হয়েছে পাকিস্তানেও। তীব্র মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট। আমদানি বন্ধ। হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। পেট্রোলপাম্পে লম্বা লাইন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডলারের বিপরীতে রুপির মান দাঁড়িয়েছে ২০৭.৫৯! দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২০৪।

এক বছর আগে ছিল ১৬৩ রুপি! চলমান এ দুরবস্থার মধ্যেই নতুন আরেক দুঃসংবাদ দিল দেশটির মুদ্রণ শিল্প। কাগজ সংকট। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বছর পাঠ্যবই ছাপাতে পারবে না পাকিস্তানের সিন্ধু, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ড । খবর এনডিটিভির।

১০ আগস্ট থেকে শুরু হতে চলেছে নতুন শিক্ষবর্ষ। কিন্তু পাকিস্তানজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে কাগজ সংকট। এ পরিস্থিতিতে আগামী শিক্ষাবর্ষের সব পাঠ্যপুস্তক ছাপা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল অল পাকিস্তান পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিন্টিং গ্রাফিক আর্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ (পিএপিজিএআই) কাগজ ও মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন।

দেশটির শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ কায়সার বাঙালির সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মুদ্রণ ব্যবসায়ী, প্রকাশক এবং কাগজ ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বর্তমান সংকটের কারণে স্কুল-কলেজের আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যবই ছাপানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির জন্য সে দেশের সরকারের ‘ভুল নীতি’ দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন কাগজ এবং মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় কাগজ উৎপাদক সংস্থাগুলোকে একতরফা ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে।

রাশ টেনেছে বিদেশি কাগজ আমদানিতে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির আবহে সে দেশে কাগজ উৎপাদন তলানিতে ঠেকায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

আগেরদিন (বুধবার ) করাচির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রকাশক ও বইবিক্রেতা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খালিদ আজিজ বলেন, আগে যে বইয়ের দাম ছিল ২০০ রুপি।

সামনের দিনগুলোতে সেই বই কিনতে হবে ৯০০ রুপিতে। কারণ হিসাবে মুদ্রণশিল্পে সরকারের ৭০ শতাংশ করারোপকে দায়ী করেন তিনি।

পাকিস্তানকে বাঁচাতে বিপুল অর্থ সাহায্য চীনের : আর্থিক সংকটের হাত থেকে পাকিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো চীন। চীনের একাধিক ব্যাংকের কনসোর্টিয়াম পাকিস্তানকে ২৩০ কোটি ডলার দিয়েছে। শুক্রবার স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে এ অর্থ জমা পড়েছে বলে টুইটে নিশ্চিত করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল।

১০ জুনের হিসাব হলো, পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের কাছে নয়শ কোটি ডলার আছে, তা দিয়ে মাত্র ৬ সপ্তাহের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব। তাই পাকিস্তানের কাছে চীনের থেকে পাওয়া ২৩০ কোটি ডলারের খুবই প্রয়োজন ছিল।

২০১৫ সালে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের অবকাঠামোর উন্নয়নে এগিয়ে আসে চীন। পশ্চিম চীনের সঙ্গে দক্ষিণ পাকিস্তানের গদারকে যুক্ত করে মহাসড়ক নির্মাণ করে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসির অধীনে প্রাথমিকভাবে ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও এখন তা ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গেও পাকিস্তানের আলোচনা চলছে। তারা যাতে আগের মতো এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি দেয় তা নিয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। বুধবার রাতে আইএমএফ ও পাকিস্তান ২০২২-২৩-এর বাজেট নিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে। সেখানে কীভাবে খরচ কমানো হবে এবং আয় বাড়ানো হবে, তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে দুপক্ষ।

দ্য ডন জানিয়েছে, সমঝোতা অনুযায়ী প্রতি মাসে পাঁচ টাকা করে পেট্রোলিয়াম কর বসানো হবে। ১০ মাস কর বসবে। কর আদায়ের টার্গেট করা হয়েছে ৪২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সংস্থাগুলোকে পভার্টি ট্যাক্স দিতে হবে। অতিরিক্ত বেতন ও পেনশনের জন্য যে তহবিল রাখা হয়েছিল, সেটাও বন্ধ করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *