কলা বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের তুলনায় বেশি।
এবার কলা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছেন শেরপুর জেলার শত শত কলা চাষিরা। অল্প ব্যয় ও অধিক পরিচর্যায় কলার ভালো ফলন হচ্ছে। তাই কলা চাষে ঝুকছে এ অঞ্চলের চাষিরা। এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত কলা চাষ জনপ্রিয় হওয়ায় বানিজ্যিকভাবে কলা চাষ হচ্ছে। শেরপুরের কলার পুষ্টিগুন ভালো তাই এ অঞ্চলের কলার বিশেষ কদর রয়েছে। এতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কলা পাঠিয়ে চাষিরা তাদের ভাগ্য বদল করছেন। অন্যদিকে আয় উন্নতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে এলাকার রূপ।
ধান ও শস্য-সবজি উৎপাদন শেরপুর জেলার কৃষকদের প্রধান ফসল হলেও এখন নতুন নতুন ফসল চাষে তারা আগ্রহী হচ্ছেন। এতে ফলও ভালো পাচ্ছেন। কলা চাষ এ জেলার অনেক চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এখানে সাগর, সবরি কলা সহ অনেক ধরনের ফলের চাষও হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে কলা সহ অন্যান্য ফলের বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার পাশাপাশি বাড়ির আশেপাশে, পুকুর পাড়ে, ডোবা, নালার পাশেও রয়েছে বিভিন্ন জাতের কলার গাছ।
কলা চাষ করতে চাষিরা গোবর, ইউরিয়া, পটাশ, ফসফেট সার মিশিয়ে জমি তৈরি করে তাতে ৩ হাত ফাঁকা করে কলার চারা লাগিয়েছেন। ৮-৯ মাসের মধ্যেই গাছে কলার মোচা আসা শুরু করে। এক বিঘায় প্রায় ৩৬০-৩৮০ টি কলার চারা লাগানো যায়। বিঘা প্রতি কলা চাষে খরচ হয় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। চাষিরা কলার বড় ছড়া বিক্রি করেন ৪০০-৪৫০ টাকায়, মাঝরি ছড়া ৩০০-৩৫০ টাকা আর ছোট ছড়া ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে ১ বিঘা জমিতে কলা বিক্রি আসে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। প্রথম চালানের পর গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলেন। কেটে ফেলা গাছের গোড়া থেকে আবার কুশি বের হয়। যাতে আবার কলা ধরে। পরে দ্বীতিয় চালান বিক্রি করতে পারেন। সাধারনত বৈশাখ মাসে গাছ রোপন করলে অগ্রহায়ণ মাসে কলা পাওয়া যায়।
সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কলা চাষি আতাব উল্লাহ বলেন, এবছর ১ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। প্রায় সব গাছেই কলা এসেছে। কলা কাটা শুরু করে দিয়েছি। বড় ছড়া ৪৫০-৫০০, মাঝারি ছড়া ৪০০ এবং ছোট ছড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।
একই গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক বলেন, ১১ মাসেই কলার ছড়া কাটার উপযোগী হয়। ৩০০-৩২০ টি কলার ছড়া পাওয়া যায়।
আরেক চাষি আব্দুর রহিম বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। এখনো কাটা শুরু করিনি। গাছে যে পরিমাণ কলা এসেছে তাতে এবছর ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।
কলা ব্যবসায়ী ও আড়তদার হাবিবুর রহমান, বিপুল মিয়া ও কাশেম মিয়া বলেন, গাছে ছড়ি আসার পরেই কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ১০০ ছড়ি ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনে নেই। কাটার উপযোগী হয়ে গেলে কেটে আড়তে নিয়ে আসি। তারপর প্রতি পুন(২০ হালি বা ৮০ পিস) কলা ৪০০-৫০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করে থাকি।
শেরপুর খামাবাড়ির ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুলতান আহম্মেদ জানান, এখন শেরপুরে বানিজ্যিকভাবে কলা চাষ হচ্ছে। এবছর প্রায় ১৩০০ চাষি কলা চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার জেলায় কলার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি মনে করেন।