নিউজ ডেষ্ক- এক সময় যশোরের রিকশা চালক থেকে রাতারাতি জাতীয় তারকায় পরিণত হন আকবর। ২০০৩ সালে বৈপ্লবিক এই ঘটনা ঘটান নন্দিত নির্মাতা-সঞ্চালক হানিফ সংকেত। আকবরের উত্থান যতটা দ্রুত ছিলো, শেষটা সেভাবে হয়নি। এভাবেও বলা যায়, অসুখ আর অভাবে ধুঁকে ধুঁকে আজ রবিবার ১৩ নভেম্বর দুপুরে তিনি মরেই গেলেন। তার এমন অসহায় সময়েও বরাবরের মতো পাশে থাকার চেষ্টা ছিলো হানিফ সংকেতের।
আকবরের চিকিৎসার বিষয়ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। তবুও আকবরের অভাবটা কাটেনি, অসুখটাও সারেনি। সুখটাও ফেরেনি। স্বাভাবিক ভাবেই আকবরের প্রস্থান খবরে কেঁপে উঠেছে সংকেতের মন। এদিন আকবরের নিথর দেহের পাশে সবার আগে তাকেই দেখার কথা, যেমনটা যায় অন্য অনেকের বেলায়। কিন্তু এবার আর সেটা হলো না। কারণ হানিফ সংকেত অবস্থান করছেন দূর রংপুরে ‘ইত্যাদি’র শুটিংয়ে।
এদিকে আকবরের মৃত্যু চিকিৎসক নিশ্চিত হওয়ার পরই স্ত্রী কানিজ ফাতেমার প্রথম কলটা যায় হানিফ সংকেতের কাছে। তার ভাষায়, ‘‘আজ দুপুরে আকবরের স্ত্রী হঠাৎ ফোন করে অঝোরে কাঁদছিলো, বললো- ‘আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে সে।’ ফোনটা যখন পাই তখন আমি রংপুরে পরবর্তী ‘ইত্যাদি’র জন্য একটি প্রতিবেদন ধারণ করছিলাম। ফোন পেয়েই বুঝেছিলাম আকবর আর নেই। কারণ বেশ কিছুদিন থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিলো না। ক্রমশই অবনতি হচ্ছিলো।”
তিনি আরও বলেন, ”নিয়মিত খোঁজ রাখছিলাম। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা হচ্ছিলো। লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস-সবকিছু মিলিয়ে শারীরিক অবস্থা ছিলো অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। অবশেষে জীবনের কঠিন সত্য মৃত্যু। তবে এটুকু সান্ত্বনা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আকবরের চিকিৎসার কোনও ত্রুটি হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং আর্থিক সহায়তাও দিয়েছিলেন। এছাড়াও অনেকেই তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’’
এদিকে স্মৃতিকাতর হানিফ সংকেত বলেন, ‘আকবরের সংগীত জীবনের উত্তরণের পথটা সহজ ছিলো না। ২০০৩ সালে যাত্রার পর থেকে অনেকটা একাই ওকে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। আকবর খুব বেশি গান করেনি। তবে যে কটা করেছে তা সব প্রজন্মের শ্রোতাদের আবেগ-অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে- যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেক দিন।’
এর আগে আজ রবিবার ১৩ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কণ্ঠশিল্পী আকবর। ৫৪ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, জন্ডিস, কিডনি, রক্তের প্রদাহসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আকবর। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৯ নভেম্বর সকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরা হলো না এই শিল্পীর।