এ দেশের মানুষ আমার সব থেকে বড় শক্তি: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

নিউজ ডেষ্ক- দেশের মানুষ পাশে থাকার কারণে বিশ্ব ব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থায়ন বন্ধ করার পরও সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে দেশের মানুষ। তাদের সাহস, সহযোগিতা ও পাশে থাকায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’

সোমবার (২৭ জুন) বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে দেশের ৪১টি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা অনুদান দেয়।

বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীরা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া পরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন আপনারা (ব্যবসায়ী) অনেকই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি দেশবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।’

পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হবে। আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে।’

রেল, নৌপথ ও সড়ক পথে যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ আমাদের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে সুযোগ সৃষ্টি করে।’

সরকারের প্রচেষ্টা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে উন্নত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; যাতে বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে এ দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।’

১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যত্রতত্র শিল্প না, আমরা পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে দৃষ্টি রেখে সব রকমের সুযোগ রেখে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।’

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে জমি সীমিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নও করতে হবে, পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় এবং কৃষি জমি রক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।’

খাদ্য নিরাপত্তা, শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় বলা হতো বাংলাদেশে গ্যাস বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে তা নেই, তারপরও আমরা আমাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। এলএনজি আমদানি করে শিল্প কারখানা চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেইসঙ্গে বন্যা। সমস্যা আসবেই। সেটা মোকাবিলা করে আমাদের চলতে হবে।’

মানুষের জীবনযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে সরকার খেয়াল রাখে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে চলে। এতে মানুষের কোনও হাত থাকে না। সিলেট বিভাগে পর পর তিনবার বন্যা হয়। হাওর অঞ্চলে আমাদের কিছু ফসলও নষ্ট হয়েছে। পানিটা নেমে আসার সময় নেত্রকোনা থেকে শুরু করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এখন মানুষের দুর্ভোগ কম। কিন্তু মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।’

ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনও দুর্যোগ-দুর্বিপাক হলেই আপনারা নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন এবং আর্তমানবতার সেবায় পদক্ষেপ নেন এবং তাদের জন্য কিছু করেন। এটা বিরাট মানবিক গুণ।’

উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রফতানি বহুমুখী করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য আমাদের রফতানির ব্যবস্থা করতে করতে হবে। সেখানে কৃষিপণ্যকে গুরুত্ব দিতে পারি। নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করা, কোন দেশে কৃষিপণ্যের চাহিদা বেশি, সেটা উৎপাদন করে রফতানি করতে পারি। সেটারও যেমন ব্যবস্থা নেবো, সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেবো, যাতে নিজস্ব বাজার গড়ে উঠে।’

সরকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেই দিকে খেয়াল রেখে নীতিমালা করে বলে জানান সরকারপ্রধান। করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধও জানান প্রধানমন্ত্রী।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *