নিউজ ডেষ্ক- এবার চট্টগ্রাম মহানগরে শারদীয় দুর্গাপূজায় থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই জন্য নাগরিকদের মানতে হবে ৩২ নির্দেশনা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পূজামণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। গতকাল বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস শেডে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এসব তথ্য তুলে ধরেন। চট্টগ্রাম মহানগরে এবার ২৬৯টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে।
এদিকে সমন্বয় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গত বছর পূজার সময় কুমিল্লাসহ সারা দেশে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। আমাদের সম্প্রীতিকে নষ্ট করার জন্য। এ কারণে পূজা উদযাপন পরিষদ সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছে। পূজা চলাকালে চার-পাঁচ দিন যাতে মোবাইলের ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। কারণ ফেসবুকে উল্টাপাল্টা লিখে অপপ্রচার চালানো হয়। ইন্টারনেটের গতি কমানো হলে গুজব থেকে বাঁচবে বাংলাদেশ।
এরপর কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তার বক্তব্যে বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সবমিলিয়ে পূজামণ্ডপকে ঘিরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। মোবাইলের ইন্টারনেটের গতি কমানোর দাবির বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিশনার প্রতিমা তৈরি, দুর্গা উৎসবের দিনগুলো ও প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত ৩২টি নির্দেশনা প্রদান করেন। এসব নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
সেই নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- পূজামণ্ডপে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রাখা, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় মণ্ডপসমূহের প্রবেশমুখে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, মণ্ডপের ভেতরে একসঙ্গে ২০ জনের অধিক লোক অবস্থান না করা, মণ্ডপের প্রবেশমুখে ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মণ্ডপের আশপাশ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা, জরুরি সেবাদানকারীদের ফোন ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করা এবং তা মণ্ডপের দৃশ্যমান স্থানে টানানোর ব্যবস্থা করা, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা, বিদ্যুতের ক্রটিপূর্ণ সংযোগ দ্রুত মেরামত করা, মন্দির বা পূজামণ্ডপে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অনুষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করা, অহেতুক কোনও প্রকার থিম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ডিজে পার্টি না করা, পূজা কমিটি বা পূজামণ্ডপ নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব থাকলে নিজেরা অথবা মহানগর পূজা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত মীমাংসা করা।
তাছাড়া নামাজ ও আজানের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখা, পূজামণ্ডপে আসা নারী দর্শনার্থীরা যাতে ইভটিজিং বা কোনও ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা, স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে প্রেরণ করা, মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা, পূজামণ্ডপের আশপাশে মেলা/জুয়ার আসর না বসানো, কোনও আতশবাজি, পটকা ফোটানো যাবে না, যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা গুজবের বিষয়ে নিকট পুলিশকে জানানো।
এদিকে প্রতিমা বিসর্জন আগামী ৫ অক্টোবর দেওয়া হবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে হবে। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত লোক প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিনসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।