বাড়ির আঙিনায় কলা বাগানের ফাঁকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এক পেঁপে গাছেই ভাগ্য বদলেছে কৃষক মোতালিবের। সেই একটি পেঁপে গাছ থেকে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ পেঁপে গাছের মালিক মোতালিব। সেই গাছ থেকেই ১৫ বছরে পেঁপে চাষ করে তৈরি করেছেন বাড়ি, কিনেছেন চাষের জমি, পিকআপভ্যান, এমনকি গরুর খামারও।
তার এই সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক এখন চাকরি বাকরি পিছনে না ছুটে পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ৪২ বছর বয়সী সফল কৃষক আব্দুল মোতালিব কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আবু হানিফার ছেলে।
আব্দুল মোতালিব জানান, আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে তার বাড়ির আঙিনায় কলা বাগানে প্রাকৃতিকভাবে দুটি পেঁপে গাছ জন্মায়। তার থেকে একটি পেঁপে গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়ে। ওই পেঁপে গাছের ভালো ফলন ও পেঁপে সুস্বাদু হওয়ায় সেই পেঁপের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি।
পরবর্তীতে জমির একটা অংশে সেই বীজ থেকে চারা তৈরি করে পেঁপে চাষ শুরু করেন। সেই বীজের চারা থেকে তার চাষ করা জমিতে সে বছর পেঁপের ভালো ফলন হয়। এরপর থেকেই পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে কৃষক মোতালিব।
এ বছর করোনার কারণে কম জমিতে ৬৩ শতাংশ পেঁপে চাষ করলেও এর আগে তিনি ৩/৪ একর জমিতেও পেঁপে চাষ করেছেন। আর এই পেঁপে চাষের মাধ্যমে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ১৫ বছরে পেঁপে চাষ করে করেছেন পরিবর্তন ঘটিয়েছেন আর্থ সামাজিক অবস্থার।
মোতালিবের বিশ্বাস, তার বাড়ির আঙিনায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো দুটি পেঁপে গাছই তার ভাগ্য বদল করে দিয়েছে।
তিনি জানান, এ বছর ৬৩ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন, এই চাষ করতে তার মোট খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো। ইতোমধ্যে তিনি এই জমি থেকে দেড় লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করছেন এবং আরও ৪/৫ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন।
তার এই সাফল্যে কৃষি অফিস ও সরকারি কোনো সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক মোতালিব জানান, কৃষি অফিস বা সরকারি কোনো অফিস বা কর্মকর্তা থেকে কখনোই তিনি কোনো পরামর্শ বা কোনো ধরণের সহায়তা পাননি। সমস্যা হলে প্রথম দিকে তিনি স্থানীয় পিরোজপুর বাজারে বিভিন্ন কৃষি ফার্মেসি ও স্থানীয় কৃষকের সহায়তা নিয়েছেন। তবে বর্তমানে গাছের যে-কোন সমস্যা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন এবং ঔষধ প্রয়োগ করতে পারেন।
স্থানীয় এক পেঁপে চাষি আ. জব্বার বলেন, মোতালিবের পেঁপে চাষ দেখে এলাকার অনেকে এই চাষে এগিয়ে এসে সবাই কম বেশি লাভবান হয়েছেন, তবে মোতালিব ব্যতিক্রম।
এই বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পেঁপে একটি লাভজনক কৃষি পণ্য। তাছাড়া মানুষ এখন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন, তাই দিন দিন কাঁচা ও পাকা পেঁপের চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর উপজেলার ৪০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে, যা পূর্বের যেকোনো বছর থেকে বেশি। লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে অনেকে পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকছে এবং আমাদের অফিস থেকে সর্বাত্মক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।