একরপ্রতি উৎপাদন প্রায় ৭ টন, কাসাভা চাষে সফলতা পাচ্ছেন চাষিরা

কৃষি ও প্রকৃতি breaking subled

নিউজ ডেষ্ক- কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হচ্ছে ‘কাসাভা’। প্রথম দিকে কম চাষ হলেও দিন দিন ব্যাপকহারে এ পাহাড়ে কাসাভার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড় এলাকায় এটি ‘কাঠ আলু’ বা ‘ঠেংগা আলু’ নামে বেশ পরিচিত। আলু জাতীয় এ উদ্ভিদটি বহু বছর ধরে পাহাড়ে চাষ হয়ে আসছে। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে কাসাভা চাষে লালমাই পাহাড়ের অর্থনীতি ও চাষিদের জীবন যাত্রার মান বদলে যেতে পারে বলে জানান কৃষিবিদরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালমাই পাহাড়ের সালমানপুর, কোটবাড়ি, হাজীর খামার, জামমুড়া, লালমাইসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা কাসাভা তোলায় ব্যস্ত আছেন কৃষকরা। মাটির নিচ থেকে টেনে বের করে তারপর পরিষ্কার করে তুলে দেয়া হচ্ছে ট্রাকে। গাছের শিকড়টা কাসাভায় রূপান্তরিত হচ্ছে। আর সেটাই বিক্রি হচ্ছে।

সদর দক্ষিণ উপজেলার জামমুড়া গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, তিনি কয়েক যুগ ধরে এখানে কাসাভা চাষ করে আসছেন। এ পাহাড়ে ১৪ বছর ধরে কাসাভা চাষ করছেন। এ বছর ৫২ একর জমিতে কাসাভা চাষ করে প্রতি একরে তার ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, লালমাই পাহাড় কাসাভা চাষের উপযোগী ভূমি। তাই ভালো ফলন হয়। তবে এর ক্রেতা কম। এক-দুটি কোম্পানি এ ফসল সংগ্রহ করে। কোম্পানি যে দাম দেয় তা নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

লালমাই এলাকার কৃষক কামাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা আগে সবজি চাষ করতেন। রোগবালাইয়ের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যেত। রোগবালাই কম হয় বলে এখন কাসাভা চাষ করছেন। ফলে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। কান্ড থেকে নতুন গাছ করা হয়। সার ও সেচ খুব একটা লাগে না। অল্প পুজিতে অধিক ফলন হয় বলে কাসাভা চাষ করি।

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, প্রতি একর জমি থেকে ৬-৭ টন কাসাভা পাওয়া যায়। কাসাভা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাপড়, চিপসসহ ইত্যাদি খাদ্য তৈরি করা যায়। এছাড়াও কাসাভা থেকে উৎপাদিত স্টাচ (মাড়) বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হয়। এর পাতা ও অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জৈবসার তৈরি হয়। পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখ টন স্টার্চ প্রয়োজন। কিন্তু দেশে বছরে উৎপাদন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টন। বাকিটুকু ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে ভালো দাম পেলে চাষিরা কাসাভা চাষ আরো বৃদ্ধি করে দিবে। ফলে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, লালমাই পাহাড়ে কাসাভার ভালো ফলন হয়। কাসাভা গাছের কান্ড ছোটো ছোটো টুকরো করে রোপণ করা যায়। রোপন করার ৮-৯ মাস পর মাটি খুঁড়ে তোলা হয় আলু। কাসাভার গাছের মূলই আলু হিসেবে ব্যবহার হয়। কাসাভা দিয়ে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, চিপসসহ বেকারিসামগ্রী এবং ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চাষিদের কিভাবে সহযোগিতা ও সচেতন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *